বিল্লাল হোসেন : যশোরে এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকি বিরাজ করছে। গত ১৩ মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টার ও কেপি (কে পপুলেশন) সেন্টারে ৫ হাজার নারী পুরুষের রক্ত পরীক্ষায় ৪৯ জনের এইডস শনাক্ত হয়েছে। তাদের ৪১ জন পুরুষ ও মহিলা ৮ জন। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ১৭ , ৩ নারীসহ ১২ প্রবাসী ও ২০ জন সমকামী রয়েছেন। শনাক্ত ৪৮ জনের ৩২ জনই যশোর শহর ও সদর উপজেলায় বাসিন্দা। জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর সুদেব কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে তাদের সেন্টার থেকে খুলনা বিভাগের ৯ জেলার ২৪৮ এইডস রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, যশোর জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এইডসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫ নারী পুরুষ। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯। তাদের ১২ জন বিবাহিত। আক্রান্ত ১২ প্রবাসীর ৩ নারী ভারত ও সৌদিআরব ফেরত। বাকি ৯ পুরুষ ভারত ও মালয়েশিয়া ফেরত। সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারী, ভাসমান যৌনকর্মী, সহকামী ও কনডম ব্যবহারে অনিহাকারীদের কারণে এইডস মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এতে করে সচেতন মহল, অভিভাবক ও স্বাস্থ্য বিভাগে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে।
এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর সুদেব কুমার জানান, গত ১৩ মাসে ৪৯ নারী পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন মারা গেছেন। আক্রান্তদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয়। বিদেশ ফেরত, ভাসমান যৌনকর্মী, মাদকসেবী, হিজড়া ও সমকামীদের কারণে খুলনা অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এইডসের প্রাদুর্ভাব রুখতে জনসচেতনতা খুবই জরুরি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, ছাত্রাবাস, আবাসিক মেস, অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ ও পারিবারিক নজরদারির অভাবে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত মানুষকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। অন্যথায় যশোরাঞ্চল মারাত্মক ভয়াবহ ঝুঁকিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.হুসাইন শাফায়াত জানান, হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এইডসে আক্রান্ত দুই নারীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা হয়েছে। প্রত্যেক গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আক্রান্ত নারী পুরুষকে হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে নিয়মিত ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে।