নিজস্ব প্রতিবেদক : আপন শ্যালক সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্স হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ‘উদ্ভাবক’ মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৫৪) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে কারাগারের কার্পেট তৈরির পুরাতন গোডাউনের সিলিংয়ের লোহার বিম’র সাথে রশি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। মিজানুর রহমান শার্শা উপজেলার আমতলা গাতিপাড়ার আক্কাস আলীর ছেলে। সাজা হওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবক করে আলোচিত হন। এছাড়া তার ছিল ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আবিদ আহমেদ জানান- প্রিন্স হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান কারাগারের কপোতাক্ষ ৩ নম্বর কক্ষের বন্দি ছিলেন। তার কয়েদি নম্বর-৮৭০৯। শুক্রবার বিকেলে মিজানুর রহমান সকলের অজান্তে কারাগারের কার্পেট তৈরির পুরাতন গোডাউনের দরজা ভেঙে ভিতরে যায়। এরপর সিলিংয়ের লোহার বিম’র সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। ঘটনাটি বুঝতে পেরে কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কি কারণে মিজানুর রহমান আত্মহত্যা করেছেন এটা তাদের অজানা। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। মিজানুর চলতি বছরের ২৪ জুলাই থেকে কারাগারে ছিলেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাকিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মিজানুর রহমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার বহনকারী কারারক্ষীদের তথ্যমতে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহমেদ জানান, ফারুক আহমেদ সন্ধ্যা ৬.৫৯ মিনিটে জানান, কারাগারে কয়েদি মিজানুর রহমানের আত্মহত্যার ঘটনাটি তার জানা নেই।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ আগস্ট মিজানুর রহমানের শ্যালক শার্শা উপজেলার আমতলা গাতীপাড়ার আক্কাস আলী মোড়লের ছেলে সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্স নিখোঁজ হন। ২১ আগস্ট ছোট নিজামপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে প্রিন্সের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় প্রিন্সের মামা বকতিয়ার রহমান অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি এজাহারে সন্দেহ করেছিলেন প্রিন্সের মোটরসাইকেলের প্রতি ভগ্নিপতি মিজানের আগ্রহ ছিল। তদন্তে হত্যার সাথে মিজানুর রহমানসহ ৪ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এই মামলায় চলতি বছরের ২৪ জুলাই যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়ন্তী রানী দাস আলোচিত উদ্ভাবক মিজানুর রহমানসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই থেকে মিজানুর কারাগারে ছিলেন। সামান্য মটর মেকানিক মিজানুর রহমান একের পর এক যন্ত্র উদ্ভাবন করে সবাইকে অবাক করেছিলেন। তার কর্মকান্ডে এলাকায় ব্যাপক সাড়া মেলে। তার উদ্ভাবনী কাজের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্র, জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যন্ত্র, যা ‘মিজান ইঞ্জিন’ নামে পরিচিতি পায়। শ্যামলাগাছী গ্রামে ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’ ছিল তার। সেখানে ভবঘুরে, ভিক্ষুক, গরিব ও অসহায় মানুষকে সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে খাবার খাওয়াতেন।