নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ যশোর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সাত সকালেই তারা ছুটে আসেন যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে। কান্না, হাহাকার আর নিস্তব্ধতায় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে শুরু হয়েছে শোকের কর্মসূচি। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শোকাহত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করেন।
দলীয় প্রধানের মৃত্যু সংবাদে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতৃবৃন্দ। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শোকাহত সাধারণ মানুষও জড়ো হন। সেখানে উপস্থিত দলের ভাইস অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন দলীয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে শোক বই রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম নিজে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা প্রয়াত নেত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন- জাতির মহান অভিভাবকের মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। অশ্রুভেজা নয়নে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, “স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু ইতিহাসের একটি পর্বের সমাপ্তি মাত্র। ইতিহাসের নতুন পাতা খোলা হবে। নতুন করে এ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই হবে। সেই লড়াইয়ে আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে। বেগম খালেদা জিয়ার জীবন এবং লড়াই-সংগ্রাম চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। দোয়া করি, মহান রাব্বুল আলামিন তাকে বেহেশত নসিব করুন। আমিন।”
শোক প্রকাশ করে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন- আজ আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়েছি। তিনি ছিলেন আপোষহীন নেত্রী, যিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তার শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। এটি দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি আরও বলেন, এই আপোষহীন নেত্রীকে যারা দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়েছে, যাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়েছে তাদের বিচার আল¬াহই করবেন। ইতিহাস তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তার নেতৃত্বে দল বহু সংকট ও দমন-পীড়ন মোকাবিলা করেছে। আজ তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সবার আশা ছিল বেগম খালেদা জিয়া আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং এ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় বেদনা।
নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদ জানান, খালেদা জিয়ার দেশপ্রেমের কারণে তিনি সারা দেশে আপষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
শোক কর্মসূচিতে জেলা বিএনপি ছাড়াও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সবাই প্রয়াত নেত্রীর আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার আদর্শে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।