বিল্লাল হোসেন : কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর, চারদিকে হলুদের সমাহার। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙ। মনে হয় যেন রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে যশোরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। লাভজনক হওয়ায় গত মৌসুমের তুলনায় বেশি জমিতে এবার সরিষার চাষ হয়েছে।
চাষিরা রঙিন স্বপ্ন বুনছে। বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ২৭ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭ হেক্টর বেশি জমি। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। যশোর সদর, শার্শা, চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলাতে সব চেয়ে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষার আবাদে ঝুঁকেছেন। এবার বিএডিসির উচ্চফলনশীল জাত বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৯ ও ‘সম্পদ’ জাতের সরিষা বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
চৌগাছা উপজেলার ফুলসরা গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, সরিষা চাষ করা মানে কম খরচে বেশি লাভ। ফলে প্রতি মৌসুমে সরিষার আবাদ করেন। এবারও ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। বাম্পার ফলনেরও আশা করছেন।
সিংহঝুলি গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে গত তিন বছর ধরে সরিষার চাষ করছি। গতবারও ভালো ফলন হয়েছিল। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে আরো কিছু সরিষা বিক্রি করেছিলাম। এ বছরও দুই বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। আমন ধানের জমিতে সরিষা চাষ করতে কোনো সেচ, সার ও পরিচর্যা ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়।
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া মডেল ইউনিয়নের চান্দুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে সরিষার চাষ করছেন। ফলনও ভালো হয়। নিজেদের পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে সরিষা বিক্রি করে লাভও হয়। এবার ২ বিঘা জমিতে তিনি সরিষার চাষ করেছে।
শ্যামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মুজিদ জানান, গত দুই মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ বাম্পার ফলন পেয়েছিলেন। এবার তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলনের আশাও করছেন।
শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এর বাজারে চাহিদা ভালো থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায়। বর্তমান সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের মতো লাভবান হতে পারবো।
বালুন্ডা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, সরিষার চাহিদা ভালো থাকাতে এবং চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকাতে প্রতি মৌসুমে সরিষার চাষ করি। আশা করছি এবারও দাম ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
নারায়নপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বারি-১৪ জাতের সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর একই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেন তিনি।
অভয়নগর উপজেলার সিঙ্গেড়ি গ্রামের সানোয়ার আলী জানান, দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মন পর্যন্ত সরিষা পাবেন। তিনি আরও জানান, মৌয়ালরা মাঠজুড়ে মৌ বাক্স স্থাপন করায় মধু উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে পরাগায়নের মাধ্যমে সরিষার উপকার হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকেছে। তাদের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে।