Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

বাল্যকালের প্রভাতফেরি : আমার দেশপ্রেমের প্রথম পাঠ

এখন সময়: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৫:৪২:৪৭ পিএম

-মোঃ আনোয়ার হোসেন বিপুল :

আমি তখন নিতান্তই শিশু। বয়স পাঁচ কি ছয় হবে। এখনো চোখ বন্ধ করলে হৃদয়পটে ভেসে ওঠে দৃশ্যটি। স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি সবে। গ্রামে থাকি। হালকা শীতের সকাল, খুব ভোরে মা ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি আমার দুই ভাই আগেই উঠে পড়েছেন। মা আমাদের জামা পরিয়ে দিলেন। বাবার হাত ধরে বাড়ি থেকে কুয়াশা ভেজা রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছি। পায়ে জুতা নেই। শুধু আমার নয়, বাবা, দুই ভাই কেও জুতা পরেননি। তখনও আমি জানি না, আমরা কোথায় যাচ্ছি। বাবা যেতে যেতে বলছেন, ‘দেশ আমাদের মা। বাংলা আমাদের ভাষা। এই ভাষা আর এই দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে। তবেই মাকে ভালবাসা হবে।’ খানিক পরে আমরা পৌঁছালাম স্কুলে। সেখানে আমাদের মতো অনেকে এসেছেন। সবাই খালি পায়ে, কারো পায়ে জুতা নেই।
জীবনের সেই প্রথম ‘অলৌকিক ভোরটি’ এখনো আমি স্মরণে রেখেছি। দেশপ্রেমের প্রথম পাঠ ‘দেশ আমাদের মা’ তিন শব্দের বাক্যটি আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছে। এরপর জীবনে অনেক বসন্ত এসেছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি। সেখান থেকে বিশ^বিদ্যালয়। পড়েছি গাদা গাদা রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি, আইন আর সমাজনীতির বই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অংশ নিয়েছি অনেক রাজনৈতিক সেমিনারে। কিন্তু দেশ আমাদের মা’ এমন প্রেমের পাঠ কোথাও পাইনি।
শিশুকালে সেই শুরু। আজও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হই শহীদ মিনারে। তবে সময় বদলে গেছে। ভৈরব, কপতাক্ষ নদ যেমন পরিণত হয়েছে খালে; তেমনি বায়ান্নর সেই একুশের আবেগ ঠিক আগের মতো নেই। নেই খালি পায়ের প্রভাতফেরি; নেই শুনশান নিরবতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি। কেন নেই? এর রাজনৈতিক, দার্শনিক বা অর্থনীতিক তাৎপর্য কী? এ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।
আমি মনে করি, একটি ‘পরাধীন জাতির’ স্বকীয়তা দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায় না। এজন্য দরকার হয় জাতীয় স্বকীয়তাকে জীবনের প্রয়োজনীয় অনুসর্গ করা। বাংলাকে বাঙালির স্বকীয়তার জন্য ভাষাটিকে জীবন ও জীবিকার ভাষায় রূপান্তরের প্রয়োজন ছিলো। যা থমকে দেয়া হয়েছিলো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে।
একাত্তরের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি স্বাধীন ভূখন্ড দিয়েছিলেন। দিয়েছেন সবুজের উপর রক্তে রঞ্জিত লাল বৃত্তের পতাকা। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে ‘অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন’ সোনার বাংলা গড়ার জয়রথ থামিয়ে দেয়। সেই কলঙ্কিত ঘটনার পর আমরা এখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পারিনি। তবে আশার কথা সেই লড়াই শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চলেছি।
সরকারের আরেকটি মহাপ্রকল্প মেট্রো রেল। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলটি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। পদ্মা সেতুতে রেললাইন সংযোগ করা হচ্ছে। দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।  
এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনার রূপপুরে। যেখানে দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। হচ্ছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর। এছাড়া  এসব মেগা প্রকল্পের বাইরে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মহাযজ্ঞ চলছে। এগুলো হলে অন্তত এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
রুপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১; জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন। তাঁর দুরদর্শি নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে সমালোচকদের ভাষায় এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন-ই হবে না, হবে অর্থনৈতিক পরাশক্তি।
এখনো স্বপ্ন দেখি, শিশুরা বড়দের হাত ধরে খালি পায়ে বাংলার দামাল ছেলে সালাম, বরকত, শফিক, রফিকদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকবে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে এমন দৃশ্য তৈরির সাহস তো আমাদের দেখাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা-ই।
লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা পরিষদ, যশোর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যশোর জেলা শাখা

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)