Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৪ আফগানিস্তান: ৪৫.১ ওভারে ২১৮ ফল: বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী

আফগানদের গুড়িয়ে সিরিজ জিতে সুপারলীগের শীর্ষে বাংলাদেশ

এখন সময়: শনিবার, ১২ জুলাই , ২০২৫, ০২:২১:৩১ পিএম

সুলতান মাহমুদ রিপন : প্রথম ম্যাচটা যদি রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়ে থাকে, দ্বিতীয় ম্যাচটা হলো তার ১৮০ ডিগ্রি উল্টো। তবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, দুই ম্যাচ শেষেই জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ! এবারের জয়টা হলো ব্যাটে-বলে পুরোপুরি দাপট দেখিয়েই! তাতে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিল টাইগাররা।
ব্যাট হাতে সুর বেঁধে দিলেন লিটন কুমার দাস আর মুশফিকুর রহিম। লিটন করলেন অনবদ্য এক সেঞ্চুরি। মুশফিক অল্পের জন্য পেলেন না সেই স্বাদ। তাদের কাঁধে চড়ে রানের পাহাড়ে চড়া বাংলাদেশ অনায়াসে সারল বাকি কাজটা। অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যবহার করা সাত বোলারের সবাই পেলেন উইকেট। তাতে আফগানিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তোলে ৪ উইকেটে ৩০৬ রান। জবাবে ৪৫.১ ওভারে ২১৮ রানে অলআউট হয় আফগানরা। আর এই জয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে বাংলাদেশ। ১৪ ম্যাচে ১০ জয়ে তাদের পয়েন্ট ১০০। প্রথম দল হিসেবে পয়েন্টের সেঞ্চুরি করল তারা। দুইয়ে নেমে যাওয়া ইংল্যান্ডের অর্জন ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট। ভারত ১২ ম্যাচে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে তিনে।
৩৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে লক্ষ্য তাড়ায় নামা আফগানিস্তানকে শুরুতেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। ওপেনার রিয়াজ হাসান রানআউট হন আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত থ্রোতে। তিনে নামা অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি শরিফুল ইসলামের কিছুটা শর্ট লেংথের ডেলিভারিতে পরাস্ত হন। উইকেটের পেছনে তার ক্যাচটি নেন মুশফিক। টিকে থাকার চেষ্টা ছিল চারে নামা আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের। কিন্তু হঠাৎ করেই অধৈর্য হয়ে পড়েন। আগে থেকে পরিকল্পনা করে সাকিব আল হাসানকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে হন স্টাম্পড।
অন্যপ্রান্তে রহমত শাহ দেখছিলেন সতীর্থদের আসা-যাওয়া। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় তার জায়গা হয় ওপেনিংয়ে। চতুর্থ উইকেটে তিনি পান যোগ্য সঙ্গী। নাজিবউল্লাহ জাদরানকে নিয়ে গড়েন দারুণ একটি জুটি। বিশাল লক্ষ্য সামনে থাকায় দ্রুত রান তোলার তাগিদ ছিল। কিন্তু ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে আফগানরা আনতে পারে কেবল ৩৬ রান। বাংলাদেশ তখন চালকের আসনে। তবে চাপ ধীরে ধীরে সরে যেতে শুরু করে জাদরান ও রহমতের ব্যাটে। তারা সামনে থাকা সমীকরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়াতে থাকেন রান। তাদের ৯০ বলে ৮৯ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে বোল্ড হয়ে যান রহমত।
রহমত অবশ্য আগে এক দফা বেঁচে গিয়েছিলেন বিভ্রান্তিকর আউট থেকে। নন স্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজের বাইরে ছিলেন তিনি। স্ট্রাইকে থাকা জাদরানের শটে ভেঙে গিয়েছিল স্টাম্প। কিন্তু স্টাম্পে লাগার আগে সাকিবের হাতে লেগেছিল কিনা তা নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। থার্ড আম্পায়ার প্রথমে আউটই দিয়ে দিয়েছিলেন। তবে পরে আরেকবার যাচাই করা হলে দেখা যায়, সাকিবের হাতে লাগেনি বল। সিদ্ধান্ত পাল্টে গেলে রক্ষা পান রহমত। প্রথমে তাসকিন টেরই পাননি বেল পড়ে যাওয়া। পরে বুঝতে পেরে তিনি মেতে ওঠেন উচ্ছ্বাসে। রহমত বিদায় নেন ৭১ বলে ৪ চারে ৫২ করে। কিছুক্ষণ না যেতেই আবার তাসকিনের আঘাত। আরেক হাফসেঞ্চুরিয়ান জাদরান গ্লাভসবন্দি হন মুশফিকের। থার্ড ম্যান দিয়ে ঠেলে দিতে গিয়ে জীবন হারান তিনি। ৬১ বলে ৭ চারে তিনি করেন ৫৪ রান।
ম্যাচের লাগাম সরে গিয়ে ক্ষীণ একটা শঙ্কা জেগে উঠতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ দলের মনে। তবে তাসকিন জোড়া শিকারে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেওয়ায় ফের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় টাইগাররা। দলের বিপদে মাঠে নামেন উইকেটরক্ষক গুরবাজ। তবে ত্রাতা হতে পারেননি। সাকিবের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৫১ রানে আফগানদের ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের জয় হয়ে যায় কেবল সময়ের ব্যাপার। এরপর মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান মিলে অপেক্ষা বাড়ান স্বাগতিকদের, ব্যবধান কমান নিজেদের হারের। দুজনই বেশ কিছু বাহারি শট খেলেন। ৪০ বলে ৩২ করে নবি আউট হন মেহেদী  মিরাজের বলে। রশিদের ২৬ বলে ২৯ রানের ইনিংস থামে মুস্তাফিজের কাটারে।
বদলি ফিল্ডার মাহমুদুল হাসান জয় সীমানার কাছে নজরকাড়া ক্যাচে মুজিব উর রহমানকে সাজঘরে ফেরান। এই উইকেটটি নেন মাহমুদউল্লাহ। আর ফজলহক ফারুকিকে বোল্ড করে আফগানদের লড়াই থামান আগের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ক আফিফ হোসেন।
প্রথম ওয়ানডের মতো তাসকিন এদিনও ছিলেন দুর্দান্ত। মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ সব স্পেল আসে তার কাছ থেকে। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ তিনি ২ উইকেট নেন মাত্র ৩১ রানে। সমান সংখ্যক উইকেট নিতে সাকিবের খরচা ৩১ রান। বাঁহাতি মুস্তাফিজের বিবর্ণ দশা অবশ্য কাটেনি। ৮ ওভারে ১ উইকেট নিতে তিনি দেন ৫৩ রান। 
এর আগে লিটন ১২৬ বলে খেলেন ১৩৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৪৭তম ওভারে ডানহাতি পেসার ফরিদ আহমাদের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি মারেন ১৬ চার ও ২ ছক্কা। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিক। র?্যাম্প শট খেলার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন ফারুকির হাতে। ৯৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংসে তিনি মারেন ৯ চার। লিটন ও মুশফিক মিলে ১৮৬ বলে যোগ করেন ২০২ রান। ওয়ানডেতে তৃতীয় উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।
শেষ ম্যাচে ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জেতার পর সাকিব-তামিম প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও আফগানদের সামলাতে লিটন-মুশফিক জুটিই ছিল যথেষ্ট। ব্যাটসম্যানরা যখন রুদ্ররূপী হয়ে উঠেন, তখন বোলাররা যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েন, তার স্পষ্ট উদাহরণ ছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে। ইনিংসের মাঝপথে সাত বোলার ব্যবহার করেও লিটন-মুশফিককে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। বরং সফরকারীদের ওপর আগ্রাসন বাড়িয়ে রানের ফুল ফুটিয়েছেন দুই ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে তাদের রেকর্ড ?জুটিতেই ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ২০২ রানের যে জুটি নির্ধারণ গড়ে দিয়েছে তিনশো রানের ভিত।  
একটা পর্যায়ে লিটন এতই আগ্রাসী হয়েছিলেন যে, আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো স্কোর বোর্ড। কিন্তু ৪৭তম ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগে লিটন ক্যাচ তুলে দিলে সেখানেই শেষ হয় বাড়তি রানের সম্ভাবনা। কারণ তার ফেরার পরের বলে ফিরেছেন আরেক সেট ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ৮৬ রানে ক্রিজে থাকা এই ব্যাটার ক্যাচ তুলে ফিরেছেন। ৯৩ বলে ফেরা মুশফিকের ইনিংসে ছিল ৯টি চার। তার আগে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন ১২৬ বলে ফিরেছেন ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে। তাতে ছিল ১৬টি চারের সঙ্গে ২টি চারের মার। এ দুজন ফেরার পর আফিফ-মাহমুদউল্লাহ সেভাবে রান তুলতে পারেননি। আফিফ অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে, মাহমুদউল্লাহ ৬ রানে।  ফরিদ আহমেদ ৫৬ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। একটি করে শিকার ফজল হক ফারুকি ও রশিদ খানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর 
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৪  (তামিম ১২ , লিটন ১৩৬,  সাকিব ২০, মুশফিক ৮৬, মাহমুদউল্লাহ ৬* , আফিফ  ১৩*  ; ফারুকি ১/৫৯ , ফরিদ ২/৫৬ , মুজিব ০/৪৯, ওমরজাই ০/৩৭,  রশিদ ১/৫৪, নবি ০/২৬, রহমত  ০/১০) 
আফগানিস্তান: ৪৫.১ ওভারে ২১৮   (রহমত ৫২, রিয়াজ ১, শহিদি ৫, আজমতুল্লাহ ৯, নাজিবুল্লাহ ৫৪, নবি ৩২ , গুরবাজ ৭, রশিদ ২৯ , মুজিব ৮, ফরিদ ৬*, ফারুকি ০; মুস্তাফিজ ১/৫৩, শরিফুল ১/৪৪,  তাসকিন ২/৩১,  সাকিব ২/৩৮ , মিরাজ ১/৫২ ১/৫২ মাহমুদউল্লাহ ১/২, আফিফ ১/০) 
ফল: বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: লিটন দাস।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)