নতুন ঘরে জমেলার রঙিন স্বপ্ন

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:১১:৪১ পিএম

শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা  : নাম জমেলা। বয়স ৬৫ বছর। জমেলার নেই কোনো জমি, নেই ঘর। পরের বাড়িতে কাজ করে তার সংসার চলে। দারিদ্রের সাথে লড়াই করে জীবন জীবিকার সন্ধান খুজঁছেন তিনি। তার ২ ছেলে অনেক আগে মারা গেছে। ছিল এক মেয়ে সেই আজ দুনিয়াতে নেই। তাই অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে জমেলার সংসার। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া করে স্বামীকে নিয়ে চলতে হয়। এই ভাবে চলতে চলতে সে ভবিষ্যতে কোনো কূলকিনারা পায় না। স্বপ্নগুলো অবাস্তবের সাথে খেলা করে দিন রাত। এভাবে চলতে চলতে তিনি একদিন খুঁজে পান সুখের ঠিকানা। মুজিব শতবর্ষে উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ দেয়া ২য় পর্যায়ে ঘর পান জমেলা। শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ফকিরের বাছড়া গ্রামে এই ঘরের অবস্থান। নতুন ঘর পেয়ে জমেলার নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছেন। স্বপ্ন গুলো তার এখন ডানা মেলতে শুরু করেছে। গত বছরের জুন মাসে তাকে দেয়া হল এ ঘর। দীর্ঘ ১ বছরে তার জীবন গেছে পাল্টে। বাড়ির আঙিনায় সে সবজিসহ নানা জাতের গাছ লাগিয়েছে। জীবন-জীবিকার সন্ধান পেয়েছে জমেলা।

সরেজমিন শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ফকিরের বাছড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় জমেলা বেগমের সাথে। জমেলা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ দেয়া ঘর পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমার নেই কোনো জমি, নেই ঘর। কষ্টের সাথে জীবন-জীবিকা চলত আমার। নিজের থাকার কোনো জায়গা না থাকাতে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন কেটেছে আমার। নিজের ছেলে-মেয়েরা অনেক আগে মারা গেছে। তাই মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে আমার সংসার চলে। এখন সরকার আমাকে সে সুখের ঠিকানা করে দিয়েছে তাতে আমার জীবন ধন্য। আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবসময় দোয়া করি। আমি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি রোপণ করে তা বিক্রি করে আয় উপার্জন করছি। ভবিষ্যতে সরকার যদি আমাদের কোনো ভাতার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমরা উপকৃত হবো।

জমেলা ছাড়াও এখানে থাকা ঘরপ্রাপ্তি ফেরদৌসী, শারমিন তাহমিনা, হালিমা ও মৌসুমি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে আমরা খুবই খুশি। আমরা এখানে প্রতিটি পরিবার মিলেমিলে বাস করছি। আগে আমাদের কোনো ঠিকানা ছিল না। এখন আমাদের নতুন ঠিকানা হয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আগামী দিনে নতুন স্বপ্ন এখন আমাদের জীবন।

শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ঝন্টু জানান, আমাদের ইউনিয়নে যাদের ভূমি নেই, ঘর নেই সেইসব মানুষের প্রথমে আমরা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করি। পরে শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে  যাচাই-বাছাই শেষ করে ১৫ জন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের মাঝে আমরা এ ঘর প্রদান করেছি। প্রতিটি টিনের ঘর ২ শতক জমির উপর তৈরি। প্রতিটি ঘর রয়েছে ছোট্ট ২টি কক্ষ ও ১টি টয়লেট। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার খরচ হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালে জুন মাসে ১৫ পরিবারের মাঝে এ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য রয়েছে টিউবওয়েল। তাছাড়া সোলার বিদ্যুতেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এই ১ বছরে প্রতিটি পরিবার তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজিক্ষেত তৈরি করেছে। যেখানে তাদের নিজের ভোরণপোষণ চলছে। আগামীতে আমাদের ইউনিয়নের যদি কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন খুজেঁ পাই তাহলে তাদের আমরা এ ধরনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম জানান, আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬৪ জেলার মধ্যে ২ জেলাকে ভূমিহীন, গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করবে। তার মধ্যে মাগুরা অন্যতম। এদিন প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পর্যায়ে (দ্বিতীয় ধাপ) সারাদেশে ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। একইদিনে মাগুরা জেলার ৪ উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হিসেবে ঘোষিত হবে। এ আনন্দের সংবাদ মাগুরাবাসীর জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। আমরা জেলায়  ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত করতে ২ বছর কাজ করছি। প্রথমে আমরা জেলায় মোট ৭৭৫ জনের তালিকা তৈরি করি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে ৬৭৮ জনকে জমিসহ ঘর প্রদান করতে সক্ষম হই।  আমরা জেলায় ৮২ একর খাস জমি উদ্ধার করি। এর মধ্যে  ২২ একর জমিতে ঘর তৈরি করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে আরো  ৯৬ নতুন ঘর প্রদানের জন্য আমাদের জেলা ও উপজেলা টিম সর্বক্ষণিক কাজ করছে।