অনিয়মের অভিযোগে চৌগাছা ছারা পাইলটের প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতি

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:৩৬:৪৮ পিএম

বাবুল আক্তার, চৌগাছা : অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোরের চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফাকে দ্বিতীয়বার অব্যাহতি দেয়া হলো।

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়ার পাশাপাশি ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফাকে ২য় বার সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।  বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুল সাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তপত্র ১২ সেপ্টেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসক, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, যশোরের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সাথে সাময়িক বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষককে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব না দেয়ার জন্য আবেদন করেন।

প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফাকে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল প্রথম বার সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই সময় প্রধান শিক্ষক নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রধান শিক্ষকের অঙ্গিকারের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুন তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ নম্বর সভায় তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে সাময়িকভাবে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

১০ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে চৌগাছা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুর রহমান বকুলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক্তন সভাপতির ২টি ও বর্তমান সভাপতির ৩টি স্বাক্ষর জাল করে জেলা পরিষদের ৩ লাখ এবং টিউশন ফিসের ৯৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া  প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা, স্টীলের বেঞ্চ বিক্রির টাকা এবং অ্যাসাইনমেন্টের খাতা বিক্রির টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি। প্রতিবেদনে আরো কিছু অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সে গুলো হলো ছাত্র বেতন আদায়ের রশিদ না থাকা, উন্নয়ন মূলক কাজে প্রধান শিক্ষক নিজে সভাপতি হয়ে প্রকল্প কমিটি গঠন করা, ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি ছাড়া নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া, রেজুলেশন বহিতে ভোটার পরিবর্তন করা।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম সাইফুর রহমান বাবুল বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর তারিখের কমিটির ৯ নম্বর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফাকে পুনরায় সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়। একই সভায় বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক প্রভাত কুমার মিশ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, একইসাথে তাকে যেন কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া না হয় সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করানো হয়েছে।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলবো।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, পত্র পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বের বিষয়টি নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, বরখাস্তকৃত  প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি বহিস্কার সংক্রান্ত বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করলে তিনি অন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তাব করলে শিক্ষাবোর্ড তাকে অনুমোদন দেবেন।