বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৩:০৯:২২ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণী অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণসহ নানা আয়োজনে যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা।  যশোর বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে।

যবিপ্রবি : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে অংশ নেন বিশ^বিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সকাল ১০টায় সরস্বতী পূজা উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞানের দেবী, সুরের দেবী। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় হলো একটি ধর্মনিরপক্ষে ও অসাম্প্রদায়িক বিশ^বিদ্যালয়। আমরা চাই, এখানে সকল ধর্মের মানুষ পারস্পারিক সোহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করবে। কারণ এ বাংলা অববাহিকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে ও আবর্তন করে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ^বিদ্যালয় তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধরে রেখেছে। আগামীতেও সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহাবস্থান বজায় থাকবে বলে আমি আশা করি। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় সম্প্রসারণ হলে সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য একটি মন্দির স্থাপনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন যবিপ্রবি উপাচার্য।

যবিপ্রবি পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ^াসের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুমন চন্দ্র মোহন্ত, কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুজন চৌধুরী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তরুন সেন, নার্সিং অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক অঞ্জন কুমার রায়, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক স্বরাজ মল্লিক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক দেবাশীষ রায়, মেডিকেল অফিসার ডা. রুদ্র প্রসাদ বিশ^াস, সেকশন অফিসার রামানন্দ পাল, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর উজ্জ্বল চন্দ্র সূত্রধর প্রমুখ। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা পরিচালনা করেন যবিপ্রবির সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি শ্রী কংকন বিশ^াস। 

সরস্বতীর পূজা উপলক্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের ডা. এম আর খান মেডিকেলের সেন্টারের সম্মুখে প্যান্ডেল করে পূজা অর্চনার ব্যবস্থা করা হয়। সকাল ছয়টার দিকে প্যান্ডেল স্থলে সরস্বতীর প্রতিমা আনা হয়। সকাল সাতটার দিকে প্রতিমা স্থাপন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় থেকে শুরু হয় পুষ্পাঞ্জলি ও হোমযজ্ঞ। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। করোনা অতিমারীর পর সকল মত-পথের লোকজনের সমাগমে পূজা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় সম্প্রীতির মিলনমেলায়।

 সরকারি এমএম কলেজ : যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে সকাল সাড়ে ১০টায় পূজা আরম্ভ করা হয়। কলেজ মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পূজা আরম্ভ করা হয়। পরিদর্শন করেন ও বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন কমিটির আহবায়ক সহযোগী অধ্যাপক অসিত কুমার দত্ত, সহযোগী অধ্যাপক নীতিশ কুমার, সহকারী অধ্যাপক বিধান ভদ্রসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সরকারি মহিলা কলেজ : সরকারি মহিলা কলেজের পূজা পরিদর্শন করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর অমল কুমার বিশ^াস, পূজা উদযাপন কমিটির আহবায়ক অলোক কুমার ব্যানার্জী, সহকারী অধ্যাপক সুভাশীষ মজুমদার, প্রভাষক দীপ্তি মিত্র, দেব প্রসাদ হালদারসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় : যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পূজা পরিদর্শন করেন যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হুসাইন শওকত। বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রধান শিক্ষক জয়ন্তী নন্দি, সহকারী শিক্ষক মেঘমালা অধিকারী, মানশী অধিকারী, শ্রাবনী পাল প্রমুখ।

জিলা স্কুল : জিলা স্কুলে পূজা অনুষ্ঠ নের আয়োজন করা হয়। পূজা পরিদর্শন করেন ও বক্তব্য রাখেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রফিকুল হাসান। উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন, অনুষ্ঠানের আহবায়ক বিধান চন্দ্র রায়,  সিনিয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম খান, প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষক স্বপ্না রানী দাস।

আব্দুর রাজ্জাক কলেজ : আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অডিটোরিয়ামে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। পূজা পরিদর্শন করেন অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক উত্তম কুমার পাল, সহকারী অধ্যাপক ড. অপন গাঙ্গুলী, প্রভাষক ইন্দ্রজিৎ রায়, সুপ্রিয়া ঘোষ সহ শিক্ষার্থী বৃন্দ।

সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন : সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন স্কুলের মন্দিরে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। পূজা পরিদর্শন করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয় : পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পূজা পালন করেছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোতোষ কুমার নন্দী, সহকারী শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র বসু, অভিনব কুমার বিশ^াস, শঙ্কর কুমার বিশ^াস প্রমুখ।

শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ : শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সকাল ৯টায় পূজা শুরু করা হয়। উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক পবিত্র কুমার স্বর, সহকারী শিক্ষক স্মৃতিলতা, মদন কুমার প্রমুখ।

এমএসটিপি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ : এমএসটিপি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে পূজার আয়োজন করা হয়। পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম।

উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষক বিথীকা দে, জগদীশ দাশ, সর্মিলী বিশ^াস, অনিমেষ অধিকারী প্রমুখ।

এছাড়া ২৫০ শয্যা যশোর জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজে পূজা উদযাপন করা হয়েছে।

খুবি : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে বাণী অর্চনা (সরস্বতী পূজা) অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে উপাচার্য বাণী অর্চনা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘পঞ্চমী’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এবারই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো অর্থায়নে বাণী অর্চনা উপদযাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের মাধ্যমে স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। বাণী অর্চনা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাণী অর্চনা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. রামেশ্বর দেবনাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উপ-রেজিস্ট্রার দীপক চন্দ্র মন্ডল।

বাণী অর্চনা উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিলো- সকাল ৮টায় মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন, সকাল সাড়ে ৯টায় দেবীর আমন্ত্রণ, সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন, সকাল সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণ এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সকল অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।