চৌগাছা উপজেলার অর্ন্তভূক্ত করার সিদ্ধান্ত

অবশেষে সাত গ্রাম নিয়ে দুই উপজেলার রশি টানাটানি শেষ হতে যাচ্ছে!

এখন সময়: বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৩৫:২৮ এম

 

 

বাবুল আক্তার, চৌগাছা : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী সাত গ্রাম নিয়ে দুই উপজেলার মধ্যে রশি টানাটানি চলছে চার দশক ধরে। এতে নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিশ্বনাথপুর, শ্যামনগর, কমলাপুর, আলিশা, যদুনাথপুর, রাড়িপাড়া ও পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বসবাসকারি প্রায় ২০ হাজার জনগণের। সর্বশেষ এই সাত গ্রামের মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার বৈঠকে যশোর জেলার চৌগাছার অর্ন্তভূক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাত গ্রামের একাংশের মানুষ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এই আপিলের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গণশুনানির জন্য বিভাগীয় কমিশনার খুলনাকে  দায়িত্ব দেয়।

বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চৌগাছা উপজেলা হল রুমে সাত গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির সময় উপস্থিত সাত গ্রামের মানুষের মুখের ভাষা ছিল, তারা কি ফিরে পাবে তাদের আপন ঠিকানা!

গণশুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আব্দুর রশিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা, উপজেলা চেয়ারম্যান ড. মোস্তানিছুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমেদ, নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুজ্জুমান, প্রেসক্লাব চৌগাছার সভাপতি অধ্যাক্ষ আবু জাফর, ১১ নম্বর সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান হবি, সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিক, নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কদরসহ সাতগ্রামের মানুষ, সংবাদকর্মী ও উপজেলার সকল কর্মকর্তাগণ। 

শুণানির সময় বিভাগীয় কমিশনার সাত গ্রামের প্রত্যেক নাগরিকের বক্তব্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেন। শুনানি শেষে বিষয়টি যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন তিনি সকলকে প্রতিশ্রতি দেন।

উল্লেখ্য. ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি রিট বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি ফারাহা মাহবুব এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খারিজ করে দেন। জানা যায়, দুই উপজেলার মধ্যবর্তি এই সাতটি গ্রাম নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে রশি টানাটানি চলে আসছিল। সাতটি গ্রাম মহেশপুর উপজেলার পক্ষে রাখতে দায়ের করা একটি রিট হাইকোট খারিজ করে দেয়ায় গ্রাম গুলো  দ্বৈত শাসনের অবসান হয়।

রিটের নথি সূত্রে জানা যায়, সাত গ্রামের মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘নিকার-৫৫ তম বৈঠকের সিন্ধান্ত মোতাবেক ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা থেকে বিযুক্ত করে গ্রামগুলো যশোরের চৌগাছা উপজেলায় যুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনে চৌগাছার অধিবাসী হয়ে গ্রাম গুলোর মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

পরে ১৯৯৪ সালে সাত গ্রামের একাংশের জনগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘নিকার-৮১ তম বৈঠকে পূর্বের সিন্ধান্ত বাতিল করা হয় এবং ৪ অক্টোবর ১৯৯৪ তারিখে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৭ গ্রামকে পুনরায় মহেশপুর উপজেলায় যোগ হয়।

বিষয়টি আলোচনায় আসলে তৎকালীন বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কর্তৃক মন্ত্রী পরিষদের সচিবের বরাবর প্রেরিত একটি উপআনুষ্ঠানিক পত্রে পুনরায় সাত গ্রামকে চৌগাছা উপজেলায় সংযুক্তির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান।

১৯৯৪ সালের সীমানা কমিশনের রিপোর্টে সাতটি গ্রামকে পুনরায় যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় অর্ন্তভুক্তি করার সুপারিশ করেন। সুপারিশপত্রে বলা হয় ‘নিকার ৮১তম বৈঠকে যথাযথ বিবেচনা না করে ৫৫ তম বৈঠকের (৭টি গ্রাম চৌগাছার সাথে সংযুক্ত করণ) সিন্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা সদরের দুরত্ব, অর্থ ও সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে ৭টি গ্রামকে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাথে যুক্ত করা যায়।

সুপারিশের ভিত্তিতে মহেশপুর ও চৌগাছা উপজেলার থানা পুনর্গঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়। নিকারের এই সিন্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম সর্দার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এম এ আজিজ ও বিচারপতি হুদার একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন। যার কারণে সাতটি গ্রাম চৌগাছার অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। ফলে ৭টি গ্রামের প্রশাসনিক কার্যক্রম দুই উপজেলার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। প্রশাসনিক দায়িত্ব মহেশপুর উপজেলায় এবং সেচ বিদ্যুৎ ও শিক্ষাবিষয়ে চৌগাছা উপজেলার নিয়ন্ত্রনে থাকে।

গণশুনানির সময় পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বকুল, রাশেদুল, রাড়িপাড়া গ্রামের পান্নু মিয়া, ফরজান, শ্যামনগর গ্রামের আব্দুল মালেক, কমলাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, বলেন, আমরা ৭ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজসহ চাকরি প্রত্যাশী ছেলে মেয়েদের চাকরির আবেদনে এবং চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় ঠিকানা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল কাজে সাত গ্রামের মানুষের যশোর জেলার চৌগাছাতে সুবিধা বেশি। তাই আমাদের দাবি পৃথক একটি নতুন ইউনিয়ন করে ঝিনাইদহ মহেশপুর থেকে আমাদেরকে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অর্ন্তভূক্ত করা হোক।