যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ

‘সফটওয়্যারে ভুল ইনপুটে’ অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৬:৪০ এম

 

মিরাজুল কবীর টিটো: নির্ধারিত স্কেল অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৩৪ শিক্ষক-কর্মচারীরা। মাস শেষে তাদের অনেকে নিয়োগপত্রে উল্লেখিত বেতনের অর্ধেকটা পাচ্ছেন। বেতন নির্ধারণ সফটওয়্যারে (‘আইবাস++’) সংশ্লিষ্টদের ভুল স্কেল ইনপুটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জাতীকরণ হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি হিসেবে আত্তীকরণের পর বেতন নির্ধারণ সফটওয়ারে এই ভুল হয়েছে। এদিকে, সরকারি স্কেলের চেয়ে বেশি উত্তোলণ করায় বেতন আটকে ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, বেতন নির্ধারণী সফটওয়ারে ১৯৮৩ ও ২০০০ সালের সরকারি আত্তীকরণ বিধির বদলে তাদের বেতন ২০১৮ সালের বিধি অনুযায়ী নির্ধারণ হয়েছে। যার কারণে তাদের সবাই নিয়োগপত্রে নির্ধারিত স্কেলের চেয়ে কম হারে বেতন পাচ্ছেন। ২০০০ সালের সরকারি হিসেবে আত্তীকরণের বিধি অনুযায়ী কলেজের প্রভাষকদের বেতন ২৮ হাজার ৮১০ টাকা।  কিন্তু সফটওয়্যারে ভুল ইনপুটের কারণে প্রভাষকদের কেউ কেউ বেতন পাচ্ছেন ২২০০০ টাকা।  আর ১৯৮৩ সালের বিধি অনুযায়ী স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ২০ হাজার ৪৪০ টাকা। কিন্তু সফওয়্যারে ২০১৮ সালের বিধি অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ হওয়ায় তাদের অনেকে বেতন  পাচ্ছেন ১৬০০০ টাকা।

২০১৭ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেমবর ৩৪ শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হিসেবে আত্তীকরণ হয়। এরপর ২০২৩ সাল থেকে সরকারিভাবে বেতনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে শুরু করেন তারা। এরআগে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তারা বেতন পেতেন যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে। এরপর ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে বেতন দেয়া হয়।    

জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যখন বেসরকারি ছিলে পদবী অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারি যে স্কেলে বেতন পেতেন সরকারিকরণের পর সেটি কারো কারোর অর্ধেকে নেমে আসে। কিন্তু সরকারি স্কেলে বেতন না নিয়ে আগের বেসরকারি স্কেলে তোলা বেতনের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের যারা বেসরকারি স্কেলে তোলা অতিরিক্ত বেতন- ফেরত দিয়েছেন তারা বেতনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা ফেরত না দেয়ায় ৬ শিক্ষক ও ৩ কর্মচারী এখনও বেতন পাচ্ছেন না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর শকিুল ইসলাম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে যেসব শিক্ষক সরকারি স্কেলের বেশি অতিরিক্ত উত্তোলণ করেছেন সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বা সমন্বয় করে নিলে বেতন পাবেন।

সরকারিকরণের পর প্রভাষক কল্যাণ সরকার, আলী নেওয়াজ, আব্দুস সামাদ ও ফাতেমা খাতুনের বেতন স্কেল হয় ২২ হাজার টাকা। কিন্তু তারা সরকারি ওই স্কেলে বেতন না নিয়ে তারা আগের বেসরকারি ৩৪ হাজার ১৭০ টাকা থেকে ৫৭ হাজার ৮৭০ টাকা স্কেলে বেতন তুলেছেন ৫ বছর ধরে। এদিকে, একই রকমভাবে স্কুলের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান, আব্দুল লতিফ, জহুরুল ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমিন, মনিরুল আলম ক্রীড়া শিক্ষক তৌহিদুর রহমানের সরকারি বেতন স্কেল ১৬ হাজার টাকা। তারা সরকারিভাবে বেতন দেয়া শুরুর আগে বেসসরকারি স্কেলে বেতন তুলেছেন ৪৭ হাজার টাকা। সরকারি স্কেলের বাইরে অতিরিক্ত নেয়া টাকা ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তারা বেতনসহ সরকারি অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাবেন না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শরীর চর্চার শিক্ষক তৌহিদুর রহমান জানান, তারা নিয়োগপত্রে উল্লেখিত স্কেলে বেতন পাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান জানান, বিধি মোতাবেক স্কেলে বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে ছোটাছুটি করছেন। সফটওয়্যারে বেতন স্কেল ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা সরকারির স্কেলের অতিরিক্ত যে টাকা বেতন তুলেছেন কিস্তিতে পরিশোধের জন্য আবেদন করেছেন। যাতে তাদের বেতন চালু হয়।

এ ব্যাপারে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কবির উদ্দীন জানান, শিক্ষকদের যারা সরকারি স্কেলের চেয়ে বেশি টাকা বেতন তুলেছেন সেটি পরিশোধ করতে হবে। সেটি পরিশোধের পর তাদের বেতন চালু হবে।