ফুলের রাজধানীতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

পানিসারায় চালু হচ্ছে ফুল বিপণন কেন্দ্র ও কোল্ড স্টোরেজ

এখন সময়: বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৫১:২৪ এম

এম আলমগীর, ঝিকরগাছা: যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারায় চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র ও কোল্ড স্টোরেজ। অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। এখন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হলে ফুলের রাজধানী  বহুল কাক্সিক্ষত এই কেন্দ্রটি চালু হবে। আর এটি চালু হলে চাষিরা এখানে ফুল ও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে খরচ কমবে তাদের।

ইতোমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কেন্দ্রটির কাগজপত্র ও চাবি হস্তান্তর করেছে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলে কেন্দ্রটি চালু হবে পুরোদমে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্দেশ্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফুল সংগ্রহের পর ফুলের ব্যবস্থাপনা, ফুল ও বীজের গুণগতমান উন্নয়ন ও বীজ সংরক্ষণ। অর্থাৎ ফুলের ‘সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং’ করা। এর মাধ্যমে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।

সূত্রমতে, মূলত ফুল চাষিদের উন্নয়নে কেন্দ্রটি ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয় ৯ কৃষক শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্র নির্মাণে এক একর জমি দেন। গদখালী-পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, কোল্ড স্টোরেজ ও আধুনিক ফুল বাজারের। তাদের সেই দাবি পূরণে ফুল বিপণন কেন্দ্র ও স্টোরেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আমেরিকান দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঝিকরগাছার পানিসারা বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করে। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও চুক্তির একটি শর্তের কারণে কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা যাচ্ছিল না।

তবে সমস্যা নিরসণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করা হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সমিতির কাছে পরিচালনার জন্য ফুল বিপণন কেন্দ্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে আপাতত বীজ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে কৃষকদের বাইরে কোথাও০ বীজ রাখা লাগবে না। কিংবা প্রতিবার চাষের সময় বীজ কেনা লাগবে না। এখানে পর্যায়ক্রমে ফুলের গ্রেডিং, সর্টিংসহ সংরক্ষণ করা যাবে। এই কেন্দ্রে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।

তিনি আরো জানান, তার পরিবারের সদস্যসহ নয়জনের দান করা জমির ওপর এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তি জটিলতায় এতদিন উদ্বোধন না হলেও এখন প্রতিষ্ঠনটির কার্যক্রম শুরু হবে।

এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের পথিকৃৎ ঝিকরগাছার পানিসারার শের আলী জানান, কোল্ড স্টোরেজ চালু হলে এখানে বীজ সংরক্ষণ করা যাবে। ফুলের গ্রেডিং ও সর্টিং করা যাবে। এছাড়া যদি কোনদিন ফুল বিক্রি না হয় তাহলে কোল্ড স্টোরে রেখে পরদিন সেই ফুল বিক্রি করা যাবে।

ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের চাষিদের প্রাণের দাবি ছিল কেন্দ্রটি চালুর। শুধু বিদ্যুৎ সংযোগটা হলে কেন্দ্রটি চালু হবে। তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলে সম্ভাবনার ফুলচাষ হলো গ্লাডিওলাস। শুধু বীজ সংরক্ষণের অসুবিধার কারণে চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছিল। এখন সেই সমস্যার সমাধান হবে।

নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন, আগে যশোরের ঝুমঝুমপুর বিএডিসি কোল্ড স্টোরেজে অনেক কষ্ট করে বীজ রাখতে হত। নারী হওয়ায় সেটা আমার জন্য খুবই কষ্টের কাজ। এখন ঘরের কাছেই কম খরচে বীজ রাখতে পারবো। এছাড়া শীতের ফুল লিলিয়ামের বীজ রাখতে পারলে আমার অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন জটিলতায় ফুল বিপণন কেন্দ্র চালু করা যায়নি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠানটি সচল করা হচ্ছে। ফলে যন্ত্রপাতিও ভাল থাকবে এবং কৃষকরাও উপকৃত হবেন। ইতোমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কন্দ্রটি পরিচালনা করার অনুমতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলে এটা চালু করা হবে। সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হবে।