কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে গ্রামবাসী

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:০০:৫৭ এম

 

কয়রা (খুলনা)  প্রতিনিধি: উপকূলীয় জনপদ সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে এই ভাঙনে এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। সোমবার ভোরে কয়রা উপজেলার কয়রা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের পোল্ডারের ২০০ মিটার অংশ ভাঙনের কারণে নদের পাড় ধসে পড়ে।

জানা গেছে, বেড়িবাঁধ ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে এটির সংলগ্ন কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ভাঙনরোধে দ্রুত পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমনের ক্ষেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদের লোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা  রয়েছে।

কয়রা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রোববার সন্ধ্যায় গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধস দেখেন। সহায়-সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কায় এলাকার কিছু মানুষ ওই রাতেই বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। সোমবার ভোরে ভাঙনরোধে পাউবোর দেয়া পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদে বিলীন হয়ে যায়।

কয়রা গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা দুঃখীরাম মণ্ডল বলেন, রোববার রাত থেকেই মাটি-বালুভর্তি বস্তা ধসে যাওয়া জায়গায় ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সকাল হতেই ভাঙনের পরিধি বেড়েছে।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা আবু মুসা ও আসলাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দুই বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ এরই মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাধের দুই পাশে মাটি দেয়া হলেও ভেতরে বালু দেয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে গেছে।

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে গিয়েছিল। সে সময় পাউবো মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ মেরামত করে। এ কারণে দুই বছর না যেতেই ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘূর্ণায়মান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে সে জন্য নদের তীরে পাকা ব্লক দেয়া দরকার।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙনকবলিত স্থানে গিয়েছিলাম, বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারলেও ভাঙনরোধে দ্রুত পাউবোকে পদক্ষেপ নিতে হবে; অন্যথায় নদের তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কয়রার এসব বেড়িবাঁধ এত দিন সাতক্ষীরা জেলার আওতাধীন ছিল। দুই বছর আগে ২ নম্বর কয়রা এলাকার বেড়িবাঁধটি জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরা পাউবো নির্মাণ করেছিল। আমরা খুলনা পাউবো সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছি। তবে প্রশাসনিক জটিলতা এখনো কাটেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।