জনবল সংকটে ধুকছে যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিট

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৯:৪৯:১০ এম

বিল্লাল হোসেন : প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্তে¡ও সেবাদানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি জনবল সংকটে ধুকছে। ফলে প্রায় দেড় যুগ আগে হৃদরোগের উন্নত চিকিৎসায় যশোরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত এই ইউনিটটি চালু হলেও প্রত্যাশিত সেবা মিলছে না। ইউনিটটিতে ১২টি পদের বিপরীতে মাত্র ২ জন চিকিৎসক আছে। একজন রোগীর সেবার ২জন সেবিকা থাকার কথা থাকলেও বাস্ততে সেটি নেই। সবমিলিয়ে ৩৪টি পদ শূন্য রয়েছে।

২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর নিজস্ব জনবল ছাড়াই যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটের উদ্বোধন হয়।  এরপর কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের ১২ জুলাই। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জনবল দিয়েই শুরু হয় চিকিৎসা কার্যক্রম। ২০২০ সালে ১২ চিকিৎসক, ১ জন নার্সিং সুপারভাইজার, ১২ সেবিকা ও ২ কার্ডিওগ্রাফারের নতুন পদ সৃষ্টি হয়। মোট ২৭ পদের বিপরীতে মাত্র তিন জন কর্মরত রয়েছেন।  এরমধ্যে চিকিৎসক ২ ও ১ জন কার্ডিওগ্রাফার রয়েছেন। বাকি ৩৪ পদে জনবল নেই। 

জানা গেছে, ২০০৫ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পরে ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও বন্ধ ছিলো চিকিৎসা কার্যক্রম। পরে পর্যায়ক্রমে ইকোকার্ডিও গ্রাম, ইটিটি, কার্ডিওয়াক মনিটর, কালার ডপলার, ডিজিটাল ইসিজি মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির বরাদ্দ মেলে। কিন্তু ছিলোনা কোন জনবল। ২০০৭ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ২৪ চিকিৎসক ৫৬ নার্স ও ১৪৩ কর্মচারী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে। কিন্তু কয়েক দফায় ইউনিটটি চালুর সময় পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নানান সংকটের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। এখোনো সেই সংকট কটেনি। 

সূত্র জানায়, করোনারি কেয়ার ইউনিটে ২৮টি বেডে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রত্যেক রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক ও ২ জন সেবিকা থাকার কথা। তবে বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখনো পর্যন্ত নিজস্ব কোন জনবল নেই বললেই চলে। হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারী দিয়ে হয় সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চলে। ১২ পদের বিপরীতে মাত্র দুই জন চিকিৎসক আছে। 

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ৭৮জন জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। এরমধ্যে চিকিৎসকের পদ ছিলো ২০, সেবিকার পদ ৩০ ও ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ ছিলো ২৮টি। কিন্তু ২০২০ সালে মাত্র ২৮ পদের অনুমোদন মেলে। এরমধ্যে ১২ জন চিকিৎসক, ১ জন নার্সিং সুপারভাইজার, ১২ জন সেবিকা ও ২ জন কার্ডিওগ্রাফার। চিকিৎসকের পদে রয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ১, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১, আবাসিক চিকিৎসক ১, সহকারী রেজিস্ট্রার ১, সহকারী সার্জন ও মেডিকেল অফিসার ৬ ও ইমাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ২ জন। এরমধ্যে ১ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ১ জন সহকারী রেজিস্ট্রার ও ১ জন রেডিওগ্রাফার যোগদান করেছেন। বাকি পদগুলো শূন্যই রয়েছে। 

এই বিষয়ে যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, পদ সৃষ্টির পরও জনবল না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। পদপূরণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।