Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

কোটচাঁদপুরে টিসিবি’র তালিকায় শিক্ষক, চেয়ারম্যানের ভাই ও চাচা !

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫, ১১:৫৬:৫৫ এম

 

আলমগীর কবির, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) : কোটচাঁদপুরে টিসিবি’র উপকারভোগী তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অস্বচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষের উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের মানুষদের এ তালিকায় এনেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষক, সাবেক জনপ্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিদের স্বজন, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের নামে। মৃত ব্যক্তিদেরও এ তালিকায় যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বঞ্চিতরা।

জানা গেছে, কোটচাঁদপুর উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৯ হাজার ৯’শ ৫১ জনকে টিসিবি’র উপকারভোগীর তালিকায় আনা হয়। জনসংখ্যার ভিত্তিতে করা তালিকায় সাফদারপুরে ২ হাজার, দোড়ায় ১ হাজার ৫’শ, কুশনায় ১ হাজার ৫’শ, বলুহরে ১ হাজার ২’শ ও এলাঙ্গি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫’শ পৌরসভায় ২ হাজার ২’শ ৫১ জনকে টিসিবি’র উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ২০২২ সালের ১৬ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেলোয়ার হোসেন প্রকৃত যাচাই বাছাই ছাড়াই জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাবিত টিসিবি’র উপকারভোগীর তালিকার অনুমোদন দেন। স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা টিসিবি’র তালিকা তৈরির সময় স্বজনপ্রীতি করার কারণে যাদের প্রাপ্য তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এদিকে টিসিবি’র তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করায় প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩ নম্বর কুশনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান সবুজ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে খাদ্য মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, উপ পরিচালক দুদক ঝিনাইদহ, র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান তার আপন ভাই মাহাফুজ্জামান, চাচা আব্দুল হামিদ ও জাকির হোসেনকে টিসিবি’র উপকারভোগীর তালিকায় এনেছেন। চেয়ারম্যানের ভাই ও চাচাদের রয়েছে বহুতল ভবন, ব্যবসা ও চাষের জমি। তাছাড়া পারিবারিকভাবে তারা এলাকায় বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। এ তালিকায় তিনি বহরমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম, তার স্ত্রী জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক রেকসনা শিরিন একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক আব্দুল আজিজ ও ধর্মীয় শিক্ষক আব্দুস সালামের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তালিকায় রয়েছে রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪ নম্বর কাশেম মুন্সী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের নাম। তালিকায় রেজাউল করিমের পেশা দেখানো হয়েছে কৃষি। এ ব্যাপারে শিক্ষক রেজাউল করিমের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না, ফেসবুকে দেখেছি আমার নামে টিসিবি’র কার্ড আছে। বহরমপুর গ্রামের কৃষক নুরুজ্জামানের নাম তালিকায় রয়েছে। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমি আপনার কাছেই শুনলাম আমার নামে কার্ড রয়েছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে অনিয়ম তদন্তের জন্য কোটচাঁদপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমারকে দায়িত্ব দেন। এ কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এভাবে ৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সংশ্লিষ্টরা যথেচ্ছভাবে টিসিবি’র তালিকা করেছেন। টিসিবি’র তালিকা তৈরিতে অনিয়মের ব্যাপারে ৩ নম্বর কুশনা ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান সবুজ বলেন বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তাই আমার বক্তব্য নিয়ে কোনো লাভ নেই। তাছাড়া টিসিবি কাকে দেয়া যাবে আর কাকে দেয়া যাবে না সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো পরিপত্র নেই। পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কোটিপতি ব্যবসায়ী ও একটি যুব সংগঠনের পৌর সভাপতির নাম টিসিবি’র তালিকায় রয়েছে। তালিকায় রয়েছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের বিত্তশালী স্ত্রীর নাম। অথচ শহরে বসবাসরত সিংহভাগ অসহায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে এ তালিকায় আনা হয়নি। কোটচাঁদপুর শহরের করাতকল মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন আমাদের করাত কলের অধীনে দেড় শতাধিক শ্রমিক দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন। অথচ এদের কাউকেই টিসিবি’র তালিকায় আনা হয়নি।

কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান বলছেন, তালিকা চুড়ান্ত হওয়ার সময় চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলাম। আমার অবর্তমানে কাউন্সিলরা দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে টিসিবি পণ্য বিতরণেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ১১ মার্চ পৌর এলাকায় টিসিবি পণ্য সরবরাহ করা হয়। এ সময় ২ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবি কার্ডধারী সাইফুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল লতিফ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওবাইদুল ইসলামসহ লাইনে অপেক্ষমান অনেকে টিসিবি পণ্য পাননি। তাদের অভিযোগ, পণ্য বিতরণের কিছুক্ষণ পর মাল শেষ হওয়ার কথা বলে বিতরণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ কার্ডধারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেন। গত ২ এপ্রিল স্থানীয় পৌরসভায় কার্ডধারীরা লাইনে দাড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকেই টিসিবি পণ্য পাননি। এমনটি জানিয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবি কার্ডধারী ফিরোজ আহাম্মেদ।

এদিকে কোটচাঁদপুর পৌরসভার প্রধান সহকারী বাবুল হোসেন জানান ঝিনাইদহ থেকে আসা ডিলাররা কোনো কোনো সময় টিসিবি পণ্য বিতরণকালে পৌর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তাদের কাজ শেষ করেন। এতে করে কর্তৃপক্ষকে নানান সমস্যার সম্মূখিন হতে হয়। বলুহর ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল জানান রোজার আগে টিসিবি’র পণ্য বিতরণের সময় প্রায় ১শ’ ৩০ জন কার্ডধারী পণ্য পাননি। এ সমস্ত বিষয়ে টিসিবি’র ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারিভাবে সকল দায়-দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মেয়র ও স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তারপরও অভিযোগ দিলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)