নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক বীরমুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দীন হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা বিএম হাই স্কুল মাঠে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর জানাজা শেষে বসত বাড়ির পাশে তাকে দাফন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল এদিন তার মরদেহে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার দেয়। এরপর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিষদ ঝিকরগাছার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়।
বরেণ্য এই লেখকের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডা. নাসির উদ্দীন, পৌর মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী প্রমুখ। জানাজায় তার বড় ছেলে কাজল রায়হান উপস্থিত সবার কাছে পিতার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান।
গত সোমবার বিকেলে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হোসেনউদ্দীন হোসেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। শারী?রিক অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশন সার্পোট দেয়ার পর মারা যান তিনি।
হোসেনউদ্দীন হোসেন ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার পান। প্রবন্ধ ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে এই পুরস্কার দেয়। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে ১৯৪১ সালে ধনাঢ্য এক কৃষি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কলিম উদ্দীন ও মা আছিরন নেছা। ৪ বোনের তিনি একমাত্র ভাই। শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।
১৯৫৫ সালে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত লোকসেবক পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। সেই শুরু। অদ্যবদি তার ৩০টি বই বের হয়েছে। এর মধ্যে কবিতার বই ২টি, গল্পের বই ২টি, ছোট গল্পের বই ২টি, উপন্যাস ৬টি, ইতিহাসের বই ৪টি, বিদেশি সাহিত্যের বই ৩টি, জীবন ভিত্তিক বই ১টি ও প্রবন্ধের ৫টি বই উল্লেখযোগ্য। তিনি সম্পাদনাও করেছেন ৩টি বই।
‘মাইস এন্ড ম্যান’ নামে তার লেখা একটি বইটি ভারতের কোলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ানো হয়। বইটি বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা। বইটির বাংলা হলো ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’। ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ এবং ‘প্লাবন ও একজন নূহ’ বই দুইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। প্লাবন ও একজন নূহ ইংরেজিতে অনুবাদের কারণে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যাল হোসেনউদ্দীন হোসেনকে টপ হানড্রেড রাইটার্স বা সেরা ১০০জন লেখকের তালিকায় ভূষিত করে। এ সময় তাকে গোল্ড মেডেল প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ইন্টারল্যশনাল বাইয়োজিক্যাল সেন্টার ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যেসব লেখকের নাম প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র হোসেনউদ্দীন হোসেনই রয়েছেন। এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি আরো অন্তত ৫০টি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন এই বরেণ্য সাহিত্যিক।