Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒যশোর জেনারেল হাসপাতাল

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন কেন ?

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি , ২০২৫, ০৩:৩৫:০৭ পিএম

বিল্লাল হোসেন : ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন কেন? এমন প্রশ্ন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের মনে ঘুরপাক খােেচ্ছ। এমন কর্মকাণ্ডে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
ওই প্রশ্নের কারণ অনুন্ধান করে জানা গেছে, নগদ টাকা ও উপঢৌকন নেয়া চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) কোম্পানির ওষুধ লিখছেন কি না তা নিশ্চিত হতে এমনটি করা হয়। ব্যবস্থাপত্রের ছবি পাঠিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আস্থা অর্জন করেন প্রতিনিধিরা।
সূত্র জানায়, ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকেরা উভয়ে লাভবান হলেও আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। কোম্পানিকে সন্তুষ্ট রাখতে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহ ওষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে না লিখে বাইরের ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। সামান্য অসুস্থ হয়ে আসলেও ব্যবস্থাপত্রে স্থান পাচ্ছে বাড়তি ওষুধের নাম।
সরেজমিন দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতেই রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় তুলে ছবি তুলছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাতের জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য সুনির্দিষ্ট দিন ও ক্ষণ নির্ধারণ করা আছে। সেটি হলো, প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুপর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। এ ছাড়া ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আছে।
সরেজমিন অবস্থান করে দেখা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল থেকেই একাধিক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হাসপাতালের বিভিন্ন কোণে ভিড় করতে থাকেন। তারা আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে ঢুকে পড়েন। কেউ মোবাইলের ক্যামেরা ওপেন করে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে আবার কেউ ছুটে চলেন ওয়ার্ডে। বহিঃবিভাগ থেকে কোনো রোগী চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতেই তারা ছোঁ মেরে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) কেড়ে নেন। এরপর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন।
হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আসমা খাতুন ও হাসি বেগম জানান, তারা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হতেই শুরু হয় টানাটানি। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে নিলেন। কেনো নিলেন তাদের জানা নেই। তারা প্রশ্ন করেছিলেন কেনো ছবি তুললেন। কিন্তু উত্তর মেলেনি।
জানা গেছে, এই হাসপাতালে মানুষের চিকিৎসা সেবায় সরকার বহিঃবিভাগে ৭৭ প্রকার ও আন্তঃবিভাগে ৪৪ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করে। কিন্তু কোম্পানির কাছে চিকিৎসকের দায় থাকার কারণে রোগীরা বিনামূল্যের ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা অধিকাংশ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে বাইরের ওষুধ লিখে দেন। এই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত থাকেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে হাউমাউ শুরু করেন। তারা বলেন, স্যার আপনি যদি রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ না লেখেন তাহলে টার্গেট পূরণ হবে না। বেতন পেতেও ঝামেলা হবে। তাই মানবিক কারণে কিছু ওষুধ লেখা হয়। চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার বিষয়ে বলেন, এই বিষয়ে নিষেধ করলেও তারা শোনেন না।
ওষুধ কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধি বলেন, কোম্পানি থেকে আমাদের পাঠানো হয়, ডাক্তার আমাদের ওষুধ লিখছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য। আমাদের মতো প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের এখানে পাবেন। সবাই ছবি তোলেন ব্যবস্থাপত্রের। ব্যবস্থাপত্রের ছবি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠালে আস্থা অর্জন করতে পারেন। কোম্পানির বেশি বেশি ওষুধ লেখা ব্যবস্থাপত্র পাঠাতে পারলেই নির্ভর করে বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি। তবে এই কাজের জন্য অনেক সময় রোগী ও স্বজনদের দুর্ব্যবহার শুনতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির যশোরের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জানান, রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা তাদের কাজের একটি অংশ। এই ছবি হলো প্রমাণ যে চিকিৎসকের সাথে তারা আন্তরিকতার সাথে সাক্ষাত করেন। তবে রোগীদের হয়রানি করে কেউ যেন ছবি না তোলে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে রাউন্ড দেয়া হয়। তারা হয়তো কর্তৃপক্ষের চোখ আড়াল করে অবৈধভাবে হাসপাতালে অবস্থান করেন। রোগীরা প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা নিয়ে রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)