নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মুন্না নামে যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের একটি শিশুকে পাচারের মামলার দীর্ঘ ২০ বছর পর আসামি রিক্সা চালক তাজুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কবির এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি ময়মনসিংহ শহরের আংকা মোড়ল পাড়ার আব্দুল খানের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের পাশের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ সাধুর ছেলে মুন্না সংসারে অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়ে আবুল কাশেমের রিক্সা গ্যারেজে কাজ করতো। মাইক্রোবাস স্টান্ডের পাশের ওই গ্যারেজে রিক্সা মেরামত করতে আসতো আসামি তাজু। সেই সুবাদে মুন্নার সাথে তাজু সখ্য গড়ে তোলে। ২০০৩ সালের ৯ জুন মুন্না বাড়ি থেকে গ্যারেজে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার ব্যর্থ হয়ে পরদিন স্বজনেরা কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পবর্তীতে রিক্সা চালক তাজু আর কোনোদিন কাশেমের গ্যারেজে রিক্সা মেরামত করতে আসেনি। মুন্নারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে একটি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে মুন্নার পরিবার জানতে পারে মুন্নাকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। ২০০৩ সালের ১০ জুন ভারতীয় বিএসএফ পাচারকারী তাজুকে আটক ও শিশু মুন্নাকে উদ্ধার করে কৃষ্ণনগর থানায় সোপর্দ করে। ভারতের আদালত পাচারকারী তাজুকে কারাগারে ও শিশু মুন্নাকে আড়িয়ালদহের ধ্রুব আশ্রমে রাখার আদেশ দেন। পাচারের শিকার মুন্নার পিতা মোহাম্মদ আলী প্রশাসন ও মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় পাসপোর্ট করে ভারতের ধ্রুব আশ্রমে গিয়ে মুন্নার সাথে দেখা এবং আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুন্নাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। দুই দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মুন্নার দেশে ফিরতে কালক্ষেপণ হয়। বেশ কয়েকবার মুন্নার দেশে ফেরার দিন ধার্য হলেও নতুন জটিলতায় তা আবার পিছিয়ে যায়। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুন্না অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক তাকে পশ্চিমবঙ্গের আর.জি.কর হাসপাতালে ভর্তি করে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসাধীন অস্থায় ৫ সেপ্টেম্বর শিশু মুন্না মারা যায়। ভারতীয় প্রশাসন আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৬ সেপ্টেম্বর মুন্নার মরদেহ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হস্তান্তর করে পরিবারের কাছে।
এ ঘটনার র্দীঘ ৮ বছর পর শিশু মুন্নাকে ভারতে পাচারের অভিযোগে পাচারকারী তাজুকে আসামি করে তার পিতা মোহাম্মদ আলী কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামি তাজু ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতি চেয়ে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেন। এই রিপোর্টের ওপর শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ না রাজি আবেদন করলে আসামি তাজুকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন ও সাক্ষীগ্রহণের দিন ধার্য হয়।
দীর্ঘ সাক্ষীগ্রহণ শেষে আসামি তাজুর বিরুদ্ধে শিশু মন্নাকে পাচারের সত্যতা পাওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাক জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত তাজু পলাতক আছে।