খুলনা প্রতিনিধি: ভেঙে পড়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ও কালো তালিকাভুক্ত করায় বিভাগটির অধিকাংশ সেবা বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসকেরা ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এ সময় আরো ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এ কাজে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন কার্ডিওলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল। ফলে গতকাল বুধবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে হাসপাতালে আসেননি অনেক চিকিৎসক।
হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্হিবিভাগের ২০২ নম্বর রুমে ডা. প্রীতম চক্রবর্তী, ২০৯ নম্বর রুমে ডা. হিমেল সাহা, ২০৭ নম্বর রুমে ডা. অনিরুদ্ধ সরদার, ২০৫ নম্বর রুমে ডা. শেখ তাসনুভা আলম, ২০৪ নম্বর রুমে ডা. সুব্রত কুমার মন্ডল, ২০৩ নম্বর রুমে আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার, ২১১ নম্বর রুমের ডা. দীপ কুমার দাশ, ২১২ নম্বর রুমে আরএমও ডা. সুমন রায়, ১০৩ নম্বর রুমে ডা. তড়িৎ কান্তি ঘোষ, ৩০৮ নম্বর রুমে ডা. নিরুপম মন্ডল, ২০৪ নম্বর রুমের ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ৪১১ নম্বর রুমের ডা. রনি দেবনাথ তালুকদার, ৪১০ নম্বর রুমে ডা. মিথুন কুমার পাল, ৪১২ নম্বর রুমে ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ, ১০৫ নম্বর রুমে ডা. শিবেন্দু মিস্ত্রিসহ প্রায় ২০ চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তারা হাসপাতালে আসেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া আন্তঃ বিভাগে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও কনসালটেন্টসহ আরো ২১ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দূরদূ-রান্ত থেকে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা থেকে আসা আরেফিন বিল্লাহ বলেন, বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকাল ১০টার দিকে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও চিকিৎসক আসেননি। আমি শিক্ষকতা করি, আজ ছুটি থাকায় এসেছি। অথচ এসে চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। শুধু আমি নই, অন্য রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন।
সাদিয়া আফরিন নামে এক রোগী বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি সেই সকালে; এখনও দেখাতে পারিনি। আজ তো দেখাতে পারিনি, আগামীকালও ডাক্তার আসবেন কি না জানি না। ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীদের সিরিয়াল দেখভালের দায়িত্বরতরা বলেছেন, সকালেই আমরা এসেছি। এসে দেখি চিকিৎসকেরা আসেননি। ফোন করলে তারা জানিয়েছেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ জন্য আসেননি। রোগীরা আসছেন, আবার ফিরে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুমন রায় মুঠোফোনে বলেন, গতকাল ইনটার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এ সময় ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে তারা উপপরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। আর আমাদের প্রায় ৫১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় আমরা আসিনি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। হাসপাতালে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসকদের নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কি না দেখতে এসেছি। সকালে আমরা এখানে এসেছি। এসে দেখি অনেক চিকিৎসক আসেননি। বহির্বিভাগে অনেক রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাচ্ছেন। একজনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে বসানোর মধ্যে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, একদিনেই ৪০ জনকে সরিয়ে দিলে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হবে। পুরো খুলনা বিভাগে এর প্রভাব পড়ছে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও কথা বলবো।