নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে সুলতানা খালেদা সিদ্দিকা রুমিকে (৬০) হত্যার কথা স্বীকার করেছে পালিত ছেলে শেখ সামস (২২)। রোববার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত আলীর আদালতে সে ওই স্বীকারোক্তি দেয়। আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছে।
মায়ের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তার মা একটি বাঁশ দিয়ে মারতে আসেন। ওই বাঁশ কেড়ে নিয়ে সে তার মায়ের মাথায় আঘাত করে। এতেই তার মা রুমি মারা যায় বলে সামস আদালতে স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে নিহতের ভাইয়ের ছেলে জুবায়ের তানভীর সিদ্দিকী জয় কোতয়ালি থানায় শেখ সামসকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলা উল্লেখ করা হয়, তার ফুফু সুলতানা খালেদা সিদ্দিকা রুমি ও ফুফা মৃত শেখ শাহজাহান রহমান ২২ বছর আগে সামসকে দত্তক নেন। তাদের কোনো সন্তান ছিলো না। ২০১৪ সালে শেখ শাহজাহান মারা যান। তারা আরএন রোডের দক্ষিণাংশে (মনিহারের বিপরীতে ফলপট্টির সামস মার্কেটের দোতলায়) বসবাস করতেন। সামস নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তারপর সে লেখাপড়া করেনি। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। টাকা পয়সা নিয়ে তার ফুফুর সাথে বিবাদ করতো সামস। মাঝেমধ্যে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো। তার ফুফু তাকে ভাল করা জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সামস তার খেয়ালখুশি অনুযায়ী চলাফেরা করতো। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সামস নেশার টাকা চায়। কিন্তু রুমি টাকা না দেয়ায় তাকে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। শনিবার দুপুরে মার্কেটের ভাড়াটিয়া নাসির হোসেন ডাকাডাকি করে। কিন্তু দরজা না খোলায় তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ গিয়ে দরজা খুলায় এবং ভেতরে গিয়ে বেড রুমে লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ সামসকে বাড়ি থেকে আটক করে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ সামস এই হত্যার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দী দেয়ার জন্য রাজি হয়। তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত আলীর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সামস জানিয়েছে, ৩/৪দিন আগে নিচের ফলের আড়তের লোকজন তাকে উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এই সমস্ত কথা বলতে সে তার মাকে নিষেধ করতে বলে। কিন্তু তার মা (নিহত রুমি) উল্টো কথা বলে তাকে মারতে থাকে। শুক্রবার গভীর রাতে এই বিষয় নিয়ে তার মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তার মা চিৎকার চেঁচামেচি করে। ঘরে থাকা একটি বাঁশ দিয়ে মা তাকে মারতে আসে। সে সময় ওই বাঁশ কেড়ে নিয়ে সে তার মাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে ঘরের মেঝেতে তার মা বসে থাকলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে যায়। সিগারেট খেয়ে এসে সে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তার মায়ের ঘরের দরজার পাশে গিয়ে দেখে রুম থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সে মনে করে তার মা মারা গেছে। সে সময় সে রুম বন্ধ করে দেয়। একজন ভাড়াটিয়া দুপুর মটরের পানি না পেয়ে বাড়িতে যায়। ভেতর থেকে সে দরজা না খুললে ওই ভাড়াটিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দেয়। পুলিশ আসলে সে দরজা খোলে। পরে লাশ উদ্ধার করে।