শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা : এই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আঙুর চাষে সাফল্য পেয়েছে শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতি ইউনিয়নের পিপরুল গ্রামের কৃষক জামিল মন্ডল। বাংলাদেশে আঙুর চাষ হয় না, অনেকে শখের বশে বিভিন্ন স্থান থেকে আঙুর চাষে সফল হয়নি। জামাল মন্ডল দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া চাকুরি করতেন। তার স্ত্রী থাকতেন সৌদি আরবে। এ দুই দম্পতি বিদেশ থেকে চাকুরি শেষে নিজ গ্রামে ফিরে ২০ শতকে জমিতে গড়ে তোলেন আঙুর বাগান। তার বাগানে এখন ধরেছে থোকায় আঙুর। বাতাসে দোল যাচ্ছে সেই আঙুর। জামাল মন্ডলের আঙুর বাগান দেখতে প্রতিদিনই বাড়িতে ভিড় করছে উৎসুক মানুষ। কেউ তার বাগান ঘুরে দেখছে, আবার কেউ জামাল মন্ডলের নিকট তার সাফল্যের গল্প শুনছে। জামাল মন্ডল এখন নিজ বাগানে আঙুর গাছের চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করছে। মাগুরার বিভিন্ন স্থানের মানুষ তার বাগানের চারা ক্রয় করে বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করছে।
উদ্যোক্তা জামাল মন্ডল জানান, আমি ও আমার স্ত্রী বিদেশ থেকে এসে আঙুর বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করি। বিদেশে বিভিন্ন ফলের বাগান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তারা খুব যত্ন সহকারে বিভিন্ন ফলের বাগান করে। তা দেখেই আমি স্বপ্ন দেখি আঙুর বাগান করার। আমি ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ৬০ আঙুর গাছের চারা সংগ্রহ করি। যশোরের লেবুতলায় আমার ভাইরা ভাই থাকে। তার সহযোগিতায় আমি জমি প্রস্তুত করে পাতলা পাতলা করে আঙুর গাছের চারাগুলো রোপণ করি। আঙুর চাষ করতে হলে প্রথমে জমির মাটি ভাগ ভাগ করে পিলি আকারে বেড তৈরি করতে হবে। তারপর বাঁশের চটার মাচা করতে হবে। চারা গাছ বড় হলে তার চারপাশে আগাছা গুলো সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আস্তে আস্তে চারা গাছ আরো বড় হলে বাঁশের চটার লাঠির সাহায্যে গাছগুলো মাচাতে তুলতে হবে। সবসময় মতো সার ও পরিমান মতো পানি দিতে হবে মাঝে মাঝে। সাবের ক্ষেত্রে দেশি জৈব সার ব্যবহার করলে ভালো হয়। ৩-৪ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে। তারপর ৬ মাসের মধ্যে গাছে ফল আসতে শুরু করে। এ চাষে প্রথমবার আমার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ বছর ২ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা আমার। এটি আমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করার ইচ্ছা পোষণ করছি। ইতোমধ্যে আমি আমার বাগান থেকে আঙুর গাছের চারা উৎপাদন করছি এবং তা বিক্রি করছি। মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসছে আমার বাগানে। তারা আঙুর খাচ্ছে, তৃপ্তি বোধ করছে এতেই আমি খুশি। আমি প্রতি চারা ২শ’ টাকা দরে বিক্রি করছি।
জামাল মন্ডল আরো বলেন, আমার ২০ শতক জমিতে ২৫-৩০ মণ আঙুর পাব বলে আশা করছি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে অনেক মহাজন আসছে আমার বাগানে। তারা বাগান দেখছে, আঙুর খাচ্ছে। পছন্দ হলে তা ক্রয় করছে। আমার বাগান দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক আঙুর বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করছে। এ কাজে আমার স্ত্রী আমাকে সারাদিন সহযোগিতা করছে। তার সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আমি এগিয়ে যাচ্ছি। চাষের কাছে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছি। বেশি বৃষ্টি হলে আমার বাগানের ফল নষ্ট হয়। তাই ফল পেকে যাওয়ার সাথে সাথে আমি উত্তোলন করি।