বিল্লাল হোসেন: যশোরে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় এডিস মশা নিধনে ভবনের ছাদে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। শনিবার যশোর সার্কিট হাউজে ‘ডেঙ্গু ও করোনা মহামারি প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
সভায় বলা হয়, ডেঙ্গু ও করোনা ভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যে যার মত চলাচল করছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ চিন্তিত।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত জ্বর। এডিস মশার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। ফলে এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ছাদে বা বারান্দা, বাথরুম বা বেসিন, প্লাস্টিকের কাভার বা কাপড় ও ফ্রিজ বা এয়ার কুলারে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। কেননা আটকে থাকা পানিতে এডিস মশার বসবাস। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে। ফুলের টব প্লাস্টিকের পাত্রে যেন কোন ভাবে পানি জমে না থাকে সেজন্য ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন বসত বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে অভিযান চালানো শুরু করতে হবে।
ফিরোজ সরকার আরও বলেন, করোনাভাইরাস বয়স্ক মানুষকে বেশি আক্রমণ করছে। এজন্য তাদের বেশি বেশি সচেতন হতে হবে। সব বয়সের মানুষের যথাযথ নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ডশেক থেকে বিরত থাকা, জনসম্মর্থে মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি কাশির শিষ্ঠাচার মানলে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। জনসচেনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি বার্তা পৌঁছে দেবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর আগে ও জুম্মার নামাযের আগে মুসল্লীর মাঝে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধ সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনসচেতনতায় প্রচারণা বাড়ানো হবে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকল ধরণের প্রস্তুতি আছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওয়ার্ডে দুইটি আলাদা বেড রাখা আছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে আলাদা ওয়ার্ড করা হবে। বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সামগ্রী রয়েছে। করোনার কীট পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় করোনা সন্দিগ্ধ ভর্তি রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পজেটিভ হলে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ৬ জন রোগী পর্যন্ত চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডটি ভাড়াটিয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানেও করোনা রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, কোভিড নিয়ে কেউ আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি রয়েছে। গত ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারা তিনজনই বয়স্ক মানুষ। করোনার পজেটিভের আগে তারা কিডনি রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে কিট সরবরাহ মিললে পুরোদমে রোগীদের করোনা পরীক্ষা শুরু করা হবে। সিভিল সার্জন জানান. গতবারের করোনায় যশোরে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৫ হাজার ৪৭৪ জন। এরমধ্যে ৫৯০ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। সিভিল সার্জন আরও জানান, যশোর জেলায় মোট ৬৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেশি অভয়নগর উপজেলায়।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যক্তি উদ্যোগে জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় আইসিইউ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ৫ শয্যার আরেকটা আইসিইউতে ওয়ার্ড দরকার। যাতে করে সাধারণ রোগীরা সেখানে চিকিৎসাসেবার সুযোগ পান।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।