বিল্লাল হোসেন : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। প্রাণঘাতী হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা এখানে ভর্তি হয়ে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের চিকিৎসা অবহেলায় একের পর এক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। মঙ্গলবার রাতেও চিকিৎসকের অবহেলায় মিজানুর রহমান (৬৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হট্টগোল ও নষ্ট ইসিজি মেশিন ভাঙচুর করে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে যশোর চাঁচড়া এলাকার মৃত হেলেন উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমানকে শ্বাসকষ্ট অবস্থায় যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর দায়িত্বরত চিকিৎসক সজল অধিকারী রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিজানুর রহমানের ছেলে ফেরদৌসের অভিযোগ, ওয়ার্ডে আনার পর রোগীকে একবার দেখে যান ডা. সজল অধিকারী। পরে অবস্থার অবনতি হলেও তিনি রোগীর কাছে যাননি। ব্যবস্থাপত্রের ফাইল নিয়ে তার কাছে গেলে তিনি রোগীকে না দেখেই ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ প্রয়োগের পরও রোগীর শারীরিক অবস্থা উন্নতি না হওয়ার বিষয়টি জানানো হলেও ওই ডাক্তার গুরুত্ব দেননি। মারা যাওয়ার পর ডাক্তার রোগীর কাছে আসেন।
ফেরদৌস আরও জানান, করোনারি কেয়ার ইউনিটের মত জায়গায় একমাত্র ইসিজি মেশিনটি নষ্ট ছিল। ফলে ভর্তির পর তার পিতার ইসিজি করানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসা অবহেলায় তার পিতা মিজানুরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে, চিকিৎসা অবহেলায় মিজানুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে হট্টগোলের সময় নষ্ট ইসিজি মেশিনটি ভাঙচুর করে। স্বজনরা দাবি করেছেন, মিজানুর রহমানকে ভর্তির পর সুচিকিৎসা মেলেনি। সিসিইউ’র জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক সজল অধিকারীর আচরণ ছিল উদাসীন।
চুড়ামনকাটি এলাকার জাহানারা বেগম নামের এক রোগীর ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান মিলন জানান, গত ২৪ জুন তার মা জাহানারা বেগমকে (৬৫) শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এ সময় অক্সিজেন দেয়ার জন্য ডেকেও কাউকে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকও তার কক্ষে ছিলেন না। ডেকেও তাকে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা অবহেলায় তার মায়ের মৃত্যু হয়। এর আগে করোনারি কেয়ার ইউনিটে সঠিক চিকিৎসাসেবা না পেয়ে দেশ টিভির যশোর প্রতিনিধি সালাউদ্দিন সাগরের মা মারা যান।
একাধিক রোগী ও স্বজনরা জানান, শুধুমাত্র সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেন। দুপুরের পর থেকে পরের দিন সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা রোগীরা পান না। সেখানকার জরুরি বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রারের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন ইন্টার্ন, মেডিকেল অফিসার অথবা অনারারী চিকিৎসক। চিকিৎসা অবহেলায় মিজানুর রহমানের মৃত্যুর রাতে দায়িত্ব পালন করা সজল অধিকারী একজন অনারারী চিকিৎসক। এভাবে চলছে গুরুত্বপূর্ণ করোনারি কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে ডা. সজল অধিকারী জানান, ভর্তির সময় মিজানুর রহমানের শারীরিক অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। চিকিৎসাসেবা প্রদান করেও রোগী বাচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগটি সঠিক নয়।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু কাম্য নয়। চিকিৎসা অবহেলায় মিজানুর রহমানের স্বজনরা লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।