বড় জয়ে টি২০ সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:২০:৩৭ পিএম

 ক্রীড়া প্রতিবেদক: গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে বাংলাদেশ ম্যাচ খেললো ২ বছর পর। সমর্থকদের নিরাশ করেননি টাইগাররা। ২০১৮ সালে ভারতের দেরাদুনে দুই দলের সবশেষ দেখায় আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ ব্যবধানে টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের কাছে ভয়ের আরেক নাম হয়ে ওঠে আফগানরা। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আফগানদের ২-১ ব্যবধানে হারানো গেলেও ভয় ছিল টি২০ সিরিজ নিয়ে। সেই ভয় অবশেষে কেটেছে টাইগারদের। 

শুরুতে লিটন দাসের দুর্দান্ত ব্যাটিং আর বল হাতে নাসুমের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬১ রানে হারিয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। ১০০ রানের আগেই সফরকারীদের উড়িয়ে দিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। টি২০ সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।  দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ শনিবার।

করোনা মহামারির কারণে গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে দুই বছরেরও বেশি সময় খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে টাইগারভক্তদের অপেক্ষার অবসান হল। প্রথম ম্যাচেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। কাঁচঘেরা প্রেসবক্স থেকেও থমকে থমকে কানে বেজেছে উত্তাল গর্জন।

ওয়ানডে সিরিজের পর টি২০তেও দাপট দেখান লিটন দাস। তিন নম্বরে নেমে ৪৪ বলে খেলেন ৬০ রানের ঝলমলে ইনিংস। তাতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। পরে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ১০ রানে ৪ উইকেট শিকার করে সফরকারীদের বেধে ফেলেন ৯৪ রানে, রয়ে যায় ১৪ বল।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০ তে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯৪ রানে সব উইকেট হারিয়ে ৬১ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারী আফগানিস্তান। এ ম্যাচে টাইগার ব্যাটার মুনিম শাহরিয়ার ও ইয়াসির আলী রাব্বির অভিষেক হয়েছে।

এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা হতাশার হলেও লিটনের ব্যাট পথ দেখায় বাংলাদেশকে। আফিফ হোসেনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৬ রান যোগ করেন তিনি। বিপিএল মাতিয়ে টি২০ দলে সুযোগ পাওয়া মুনিম শাহরিয়ারের অভিষেক হয়েছে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খারাপ করেননি ডানহাতি ওপেনার।

বাংলাদেশ দলের নিয়মিত ওপেনার নাঈম শেখ ৫ বলে মাত্র ২ রান করে আউট হলেও মুনিম পেরিয়েছেন দুই অঙ্ক। তিন চারে ১৮ বলে ১৭ রান করে রশিদ খানের বলে হন এলবিডব্লিউ। কাভার দিয়ে তার প্রথম চারটি ছিল দেখার মতো।

দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান দলীয় পঞ্চাশের আগেই ফেরেন সাজঘরে। চার নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটার ৬ বলে করে যান ৫ রান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দুই অঙ্ক ছুঁয়ে আউট হন। ৭ বলে করেন ১০ রান। ৮০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর লিটনের সঙ্গে জুটি জমান আফিফ। লিটন ৬০ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটি। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছয়ের মার। লিটনের বিদায়ের পর ফিরে যান আফিফও। বাঁহাতি ২৪ বলে ২৫ রান করেন দুটি চারের সাহায্যে। এই ম্যাচে আরেক অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরী ৭ বলে ৮ রান করে রান আউটের শিকার হন। মি. এক্সট্রা থেকে আসে ১৬ রান। ফজল হক ফারুকি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। কাইস আহমেদ ও রশিদ খান নেন একটি করে উইকেট।

১৫৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের, বিশেষ করে নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও সাকিবের সামনে রীতিমত অসহায় হয়ে পড়ে আফগানিস্তান। ১৭.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৪ রান তুলতেই।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান আসে নজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাট থেকে। এছাড়া আজমতুল্লাহ ওমরজাই ২০ ও মোহাম্মদ নবী ১৬ রান করেন। মূলত নাসুমের স্পিন ভেল্কিতেই শুরুতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আফগানরা। পরে আফগানদের লেজ গুটিয়ে দেন শরিফুল।

নাসুম এদিন একাই মাত্র ১০ রানে ৪টি উইকেট নেন। যা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রেকর্ড। আর শরিফুল ৩টি উইকেট নেন ২৯ রানের বিনিময়ে। যা তারও ক্যারিয়ার সেরা। মাঝে অবশ্য সাকিব ২টি উইকেট ও মুস্তাফিজ একটি উইকেট দখল করেন।

তবে এদিন দুটি উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান পূরণ করেছেন তাঁর সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ৪০০তম উইকেট শিকার। তবে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন নাসুম আহমেদই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১/৮ (মুনিম ১৭, নাঈম ২, লিটন ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, আফিফ ২৫, ইয়াসির ৮, মেহেদি , নাসুম ৩*; ফারুকি ২/২৭,  রশিদ ১/১৫, কাইস ১/২১, ওমরজাই ২/৩১)।

আফগানিস্তান: ১৭.৪ ওভারে ৯৪ (জাজাই ৬, গুরবাজ ০, রাসুলি ২, নাজিবউল্লাহ ২৭, করিম ৬, নবি ১৬, ওমরজাই ২০, রশিদ ১, কাইস ৮, মুজিব ৪, ফারুকি ০*; নাসুম ৪/১০, মুস্তাফিজ ১/১৯, শরিফুল ৩/২৯, সাকিব ২/১৮)।

ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: নাসুম আহমেদ।