বিল্লাল হোসেন : যশোরে নামমাত্র হসপিটাল ও ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারি নিয়ম মেনে না চলায় সেখানে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে একের পর এক প্রাণ ঝরছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী কাজলকে সোমবার (২৪ জুন) রাত ১০ টার দিকে যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সিটি হসপিটালে সিজার করা হয়। অস্ত্রোপচার করেন ডা. ফারজানা পারভীন। তাকে অচেতন করার দায়িত্বে ছিলেন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিন) ডা. আহসান কবির বাপ্পি। সিজারের পর রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোরে প্রসূতি কাজল মারা যান। এ ঘটনায় তার স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে হসপিটালের সামনে বিক্ষোভ করেন। (২৬ জুন) বুধবার সিভিল সার্জনের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে (২৪ জুন) সোমবার সদর উপজেলার রুপদিয়ার গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের পর মারা যান নরেন্দ্রপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রিমা। এ ঘটনায় প্রসূতির স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লিনিকটি ভাঙচুর করেছে। পালিয়ে রক্ষা পান এমবিবিএস ডা. নুরছালী ও তার স্বামী ক্লিনিক মালিক জামাল হোসেন। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে ক্লিনিকটিকে সিলগালা ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কাজল ও রিমা ছাড়াও গত কয়েক মাসে নামমাত্র ক্লিনিক ও হসপিটালে ত্রæটিপূর্ণ অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা অবহেলায় একাধিক রোগী মারা গেছেন। তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার মুনসেফপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে রুনা বেগম (২৬), মুড়লি মোড়ের জোড়া মন্দির এলাকার বিপ্লব হোসেনের ছেলে ইরহাম (৪১ দিন), চাঁচড়া মধ্যপাড়ার রবিউল ইসলামের মেয়ে মীম খাতুন (১২), চাঁচড়া মধ্যপাড়ার রবিউল ইসলামের মেয়ে মীম খাতুন (১২), ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের বামন আলী চাপাতলা গ্রামের ড্রাইভার গোলাম রসুলের স্ত্রী আসমা বেগম (৩২) ও মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর আব্দুস সাত্তার মিস্ত্রির ছেলে আব্দুল মান্নান (৪০)। এ ছাড়া অপচিকিৎসা ও প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, যশোর শহরে সরকারের নির্দেশনা না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো হসপিটাল ও ক্লিনিক গড়ে বহাল তবিয়তে কার্যক্রম চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও রোগ নির্ণয়ের জন্য উন্নতমানের কোনো যন্ত্রপাতি নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হলেও আবারো চালু হয়ে যায়।
যশোরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান জানান, দুই প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার সুযোগ দেয়া হবে না।