Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে ‘একমত’ সব দল

এখন সময়: মঙ্গলবার, ৮ জুলাই , ২০২৫, ০২:১৪:৫৫ এম

 

স্পন্দন ডেস্ক: নাগরিকদের ‘সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য’ উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনে সকল রাজনৈতিক দল ‘একমত হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের দশম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এ কথা জানান।

আলী রীয়াজ বলেন, “নাগরিকের কাছে সুবিচার পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে।”

তবে দল ও জোটগুলো অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার সুপারিশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দলগুলো মনে করে, যেসব উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত, অর্থাৎ সদর উপজেলায় অবস্থিত, সেসব উপজেলা জেলা জজ কোর্টের অধীনে এনে সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

“বিদ্যমান চৌকি আদালত দীপাঞ্চল ও ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালত বহাল রেখে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে প্রয়োজন নেই, সেজন্য প্রয়োজনীয় জরিপ করতে হবে।”

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনায় নিয়ে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা দরকার, তা নির্ধারণ করতে হবে।

যেসব উপজেলায় এখন চৌকি আদালত পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো চৌকি আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তর করা প্রয়োজন কি না, সে ক্ষেত্রেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে।

বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে উপজেলা সদরে স্থাপিত কোনো আদালতের জন্য একাধিক উপজেলাকে সমন্বিত করে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা আদালতগুলোতে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে বাস্তবানুগ করা দরকার। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে।

কত বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করা হবে, তা নির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয় কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে।

কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “অধস্থন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও অর্থ বরাদ্দ এবং আইনগত সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এগুলো বিবেচনায় ঐক্যমত কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো আশা প্রকাশ করেছে, সেটা ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে।”

এবার বিএনপিও একমত

১৯৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে উপজেলা আদালত বাতিল করলেও এখন তা ফেরানোর পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আজকের আলোচনা ছিল জেলা আদালত বিকেন্দ্রীকরণ। সে বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়েছে, তবে কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

“জেলা সদরে উপজেলায় আদালত প্রয়োজন নেই, জেলা আদালতে একটি সদর আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। ব্রিটিশ আমলের চৌকি হিসেবে চিহ্নিত ছিল দ্বীপ অঞ্চল এবং কিছু কিছু উপজেলায় আদালত আছে। তার সংখ্যা ৬৭টি। সেগুলো প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

“জেলা সদরে কাছের উপজেলা গুলো ১৫-২০ কিলোমিটারে মধ্যে থাকলে সে উপজেলায় আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নাই। তবে সদর থেকে দূরে ১০০ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা বেশি সে উপজেলায় আদালত করা যায়।”

বিএনপি ১৯৯১ সালে উপজেলা আদালত বাতিল করেছিল, এখন কেন আবার চাইছে, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল সালাহউদ্দিন আহমদের সামনে।

জবাবে তিনি বলেন, “১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং তখনকার জাতীয় সেন্টিমেন্টে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া উপজেলা আদালতগুলো তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে একমত হয়। সে বিষয়ে জাতীয়ভাবে কোনো আপত্তি আসেনি।

“জনসংখ্যা, দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে এখনো অধস্তন আদালত আছে। এখন একটা প্রেক্ষাপট এবং বিবর্তনের মধ্যে যাচ্ছি, বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজনে ও জনগণের স্বার্থে সেই বিবেচনা তো পালটাতেই হয়।”

দেশের ২৩টি জেলায় বর্তমানে ৪০টি চৌকি আদালত রয়েছে। এসব চৌকিকে স্থায়ী আদালতে রূপ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামী।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এসব চৌকির অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে হবে।

উপজেলা স্তরে আদালত সম্প্রসারণ করা হলে দুর্নীতি বাড়বে কি না–এমন প্রশ্নের উত্তরে আযাদ বলেন, “দুর্নীতি অনেক জায়গাতেই হয়। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, জনসচেতনতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। জনগণকে সুশাসন ও সুবিচার দিতে হলে বিচারব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে।”

জরুরি অবস্থার বিধান

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এদিন জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়।

আলী রীয়াজ বলেন, “বিদ্যমান সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় দুটি বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। ১৪১ অনুচ্ছেদের ক খ গ ঘ ধারা সংশোধন বিয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। আরো একমত হওয়া গেছে জরুরি অবস্থা যেন কোনোভাবে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয়। তারপরেও আমরা বলছি না ১৪১ অনুচ্ছেদ আজকেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।”

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জরুরি অবস্থা আইন সংশোধন ও রাজনৈতিক স্বার্থে এর ব্যবহার বন্ধে বিএনপি একমত হয়েছে।

“সংশোধন এবং পরির্বতন আনয়নের ক্ষেত্রে আমরা সবাই একমত হয়েছি। জরুরি আইন যেন কোনোভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।”

সোমবারের আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে নারী আসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও ছিল। তবে সেই আলোচনা বৃহস্পতিবার হবে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “আজকে তিনটি বিষয়ের আলোচনা করার কথা থাকলেও আগের দিনের দুটি বিষয়ের নিস্পত্তির জন্য দুটি বিষয়ের আলোচনা করা যায়নি, সেগুলো বৃহস্পতিবার আলোচনা করব।

“এছাড়া জরুরি অবস্থার বাকি আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।”

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল এদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)