নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর : ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয় মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোরী মাহমুদা সিদ্দিকা। সে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামের আরিফুল হকের মেয়ে। এ ঘটনায় শুক্রবার অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। যার মামলা নম্বর ১১ ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার গ্রামের একটি পুকুর হতে কিশোরীর নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রুটি চুরির অপবাদ সইতে না পেরে সাঁতার না জানা কিশোরী পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চলে। আগের দিন মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে গ্রামে একটি দোকান হতে রুটি চুরি করায় কিশোরী জন সম্মুখে তার মা জুতা পেটা করেন। এতে অভিমানে আত্মহত্যা করতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে মরদেহ ময়না তদন্তে পাঠায় মণিরামপুর থানা পুলিশ। এরপর উন্মোচিত হতে থাকে কিশোরীর মৃত্যুরহস্য।
ঘটনায় জড়িত অপরাধী ধর্ষণসহ হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। এতে দেকানের রুটি চুরির অপবাদ মাথায় রেখে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতেই মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়া হয় বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে, পুলিশ কয়েটি ইস্যুকে সামনে রেখে এ ঘটনায় জড়িতকে শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিহতের মা জানান, মৃত্যুর আগের দিন রুটি চুরির কথা দোকান মালিক আলী হাসান জানালে তিনি সেখানে গিয়ে মেয়েকে জুতা দিয়ে মারপিট করে বাড়িতে আনেন। ওই দিন বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তার সাথে মেয়ে গোয়ালঘর পরিষ্কারের কাজ করেছে। পরে কখন বাড়ি থেকে বের হয় তিনি জানতে পারেননি। প্রাপ্ত বয়ষ্ক মেয়ের সম্মানের কথা ভেবে কাউকে না জানিয়ে নিজেরাই খুঁজতে থাকেন। পরদিন পুকুর থেকে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়।
নিহতের পিতা আরিফুল হক বলেন, তার মেয়ে একটি কওমী মাদ্রাসায় মিজান (সপ্তম শ্রেনি) ক্লাসে পড়তো। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে ইমামতি করেন।
স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া মিম জানান, ওইদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার সময় কিশোরীকে পুকুরে গোসল করতে দেখেন কিন্তু ফেরার সময় আর দেখেননি।
নিহত কিশোরীর বাড়ি হতে পুকুরে যেতে ঘন বাগান পার হতে হয়। তাদের বাড়িও অনেকটা নির্জন এলাকায়। অনেকের ধারনা গোসল শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। সেটিকে ধামাচাপা দিতে কিশোরীকে হত্যা করা হয়। পরে ধর্ষণের আলামত নষ্টসহ পুরো ঘটনা আড়াল করতে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে কিশোরীর মরদেহ সুযোগ বুঝে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
ময়না তদন্তকারি কর্মকর্তা ডাঃ বাবুল কিশোর প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় থানায় ধর্ষণসহ হত্যা মামলা নথিভূক্ত হয়েছে বিধায় কিশোরী মাহমুদা সিদ্দিকার উপর নৃশংসতার ঘটনাটি পরিষ্কার।
মণিরামপুর থানার ওসি বাবলুর রহমান খান এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার কথা নিশ্চিত করেছেন।