Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

অনলাইনে ব্যক্তির ১০ তথ্য আইনি সুরক্ষা পাবে, দুই অধ্যাদেশ জারি

এখন সময়: সোমবার, ১০ নভেম্বর , ২০২৫, ০৩:৩০:৪০ এম

 

স্পন্দন ডেস্ক: ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনায় দুটি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার, সেখানে অনলাইনে ব্যক্তির আর্থিক, স্বাস্থ্য ও সম্প্রদায় সম্পর্কিত তথ্যসহ ১০ রকমের তথ্য আইনি সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।

এই আইনের ফলে নাগরিকের ব্যক্তিগত উপাত্তের সুরক্ষা ও মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে সরকারের তরফে বলা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে নাগরিকদের জন্য ‘একক ডিজিটাল পরিচয়ের’ ধারণার কথা বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে ‘একক আইডি’ দিয়ে নিরাপদে নানা সরকারি ও ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করা যাবে।

বৃহস্পতিবার ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা (পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন)’ অধ্যাদেশ ও ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা (ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স)’ অধ্যাদেশ এর গেজেট প্রকাশিত হয়।

রোববার সন্ধ্যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যব লিখেছেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘ডেটা গভর্নেন্স’ এর যুগ শুরু হয়েছে। জনগণের ‘ডেটা’ বিক্রি করে প্রতারণা বা ‘ডার্কওয়েবে ডেটা’ বিক্রির দিন এর মাধ্যমে শেষ হল।

তার আগে ২০২৩ সালে অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের পথ বন্ধ করতে একটি আইন করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

সে সময় ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়। তবে বিতর্কের মুখে সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে এ সংক্রান্ত আইন করার উদ্যোগ নেয়। গেল ৯ অক্টোবর ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা’ ও ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা’ অধ্যাদেশ অনুমোদন করে সরকার, যা বৃহস্পতিবার গেজেট আকারে জারি করা হল।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে মানুষের জেনেটিক ও বায়োমেট্রিক উপাত্তসহ, আর্থিক, সম্প্রদায় ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, যৌন অভিমুখিতা, অপরাধ সংঘটন, তাৎক্ষণিক অবস্থানের মতো ১০ রকমের উপাত্তকে ‘সংবেদনশীল উপাত্ত’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আর ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা’ অধ্যাদেশে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা নীতিনির্ধারণী বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে।

যার ফলে ব্যক্তির উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও ব্যবহারের আগে তার সম্মতি গ্রহণের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশ দুটির মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত উপাত্তের বা ডেটার গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিককে তার তথ্যের প্রকৃত মালিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও ব্যবহার করার আগে তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এছাড়া সংবেদনশীল তথ্য যেমন: আর্থিক, স্বাস্থ্য, জেনেটিক ও বায়োমেট্রিক অতিরিক্ত সুরক্ষা পাবে এবং সুরক্ষার লঙ্ঘন ঘটলে প্রশাসনিক জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, অর্থদণ্ড ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ সকল বিষয় তদারকি করতে একটি উচ্চ ক্ষমতা বিশিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যের উপর তার নিজস্ব মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো পক্ষ কেবল ডেটার জিম্মাদার বা প্রক্রিয়াকারী হিসেবে তা প্রক্রিয়া করতে পারবে।

“ডেটাধারী হিসেবে নাগরিক যেকোনো উপাত্ত-ভাণ্ডারে (ডেটাবেইসে) থাকা নিজের তথ্য দেখতে, ভুল সংশোধন করতে, তথ্য মুছতে এবং নিজের উপাত্তের দ্বারা স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্তে বাধাদান করার অধিকার ধারণ করবে। ডেটার যেকোনো অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে জোরালো পদক্ষেপ।”

শিশু ও সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা

শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপাত্ত সংগ্রহে তার অভিবাবকের সম্মতি প্রয়োজন হবে তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপাত্ত সম্পর্কে কার্যকর বিধান আছে অধ্যাদেশে, তাদের জন্য উপাত্ত সংগ্রহে অভিভাবক বা অভিভাবিকার সম্মতি আবশ্যক। শিশুদের অনলাইন ট্র্যাকিং বা প্রোফাইলিংকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন বা ইত্যাদি কার্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

নাগরিকের উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে। এই জাতীয় কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা।

সেখানে আরও নয়টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকেও যুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “এই কর্তৃপক্ষই ব্যক্তিগত উপাত্তসহ অন্য সকল ধরণের উপাত্তের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন, আইনানুগ অনুবর্তিতার (লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স) তদারকি এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে। কর্তৃপক্ষ সকল রাষ্ট্রীয় সফটওয়্যার ও উপাত্ত-ভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিধান করবে।

“এ ধরণের সকল সোর্সকোড, জাতীয় ‘সোর্সকোড রিপোজিটরিতে’ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে রাষ্ট্র এরূপ সকল সফটওয়্যারের ‘ভেন্ডর-লক’ এবং ‘সফটওয়্যার-লক’ পরিস্থিতির অবসান ঘটাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সকল উপাত্ত-জিম্মাদার, প্রক্রিয়াকারী এবং প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।”

উপাত্তের নিরাপদ বিনিময়ের জন্য এই অধ্যাদেশবলে একটি ন্যাশনাল ‘রেসপন্সিবল ডেটা এক্সচেঞ্জ (এআরডেক্স)’ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটির মাধ্যমে অনুমোদিত, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এবং ন্যূনতমকরণের নীতি অনুসরণ করে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান পরস্পরের মধ্যে উপাত্ত সহজে বিনিময় করতে পারবে এবং এতে উপাত্তের আন্তঃপরিচালন (ইন্টার অপারেশন) বিষয়ে নাগরিকের ও উপাত্ত-জিম্মাদারের ভোগান্তি কমবে।

বাংলাদেশের এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধ্যাদেশে সংযোজন করা অধিকার-দায়িত্বগুলো একইসাথে বিনিয়োগবান্ধব এবং মানবাধিকার বিষয়ক সুরক্ষা দেবে। এতে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য, ‘ক্লাউড কম্পিউটিং’ ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি-বাণিজ্যে সহযোগিতা সহজ হবে। রাষ্ট্রের সর্বোপরি ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত হবে।

এই অধ্যাদেশের বিষয়ে শনিবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে ফয়েজ তৈয়্যব লিখেছেন, “মানুষের ডেটা যাচ্ছেতাইভাবে ‘ডিল’ করা, ডেটা বিক্রি করার বদমাইশি আজ থেকে আইনিভাবে শেষ হলো।”

তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা আইন গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে।

“আজকের দিনের আগে এবং পরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের উপাত্ত ব্যবস্থাপনা প্রশ্নকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ‘ডিল’ করতে হবে আইনিভাবে, ‘প্ল্যাটফর্ম লায়াবিলিটির’ দিক থেকে, গোপনীয় এবং সংবেদনশীল ডেটা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে, সর্বোপরি উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিনিময় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের দিক থেকে।

“মানুষের ডেটা যাচ্ছেতাইভাবে ‘ডিল’ করা, ডেটা বিক্রি করার বদমাইশি আজ থেকে আইনিভাবে শেষ হল। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মদদ পুষ্ট ও সহযোগী কোম্পানিগুলো এবং কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মগুলো যে দুর্বৃত্তপনা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ঘোরতর লঙ্ঘন, যে নিরাপত্তাহীনতা এবং ডার্ক ওয়েবে ব্যক্তিগত ডেটা বিক্রির যে অনাচার বাংলাদেশে তৈরি করেছে, আজ থেকে তার কবর রচিত হল।”

ফয়েজ তৈয়্যব লিখেছেন, “আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ব্যক্তির তথ্য উপাত্ত নিয়ে জবাবদিহিহীন আদান-প্রদান এবং অবৈধ ব্যবসা আজ থেকে আইনিভাবে রহিত হল। প্ল্যাটফর্মগুলোর যৌক্তিক আচরণের অধ্যায়ও শুরু হল। বাংলাদেশের ডেটা সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করে ডিজিটাল ব্যাবসা করতে পারবে না কেউ।”

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)