প্রেম করার অপরাধে মধ্যযুগীয় নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু !

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ১২:২৭:৫৯ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর : প্রেমজ সম্পর্কের জেরে মেয়ের পরিবার পারভেজ হাসান (১৯) নামে এক যুবককে ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার পর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনকালে জোর করে ওই যুবকের মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। মারা যাওয়ার আগে নিহত যুবক পারভেজ হাসান হাসপাতালের বেডে শুইয়ে একটি ভাষ্যে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার কথা বলে গেছে। যার একটি ভিডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় মেয়ের পিতাসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। মণিরামপুর উপজেলার বাগডোব গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানাযায়, ইসমাইল হোসেনের ছেলে পারভেজ হাসান শৈশব থেকেই নানা বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে আসছিল। পারভেজ গেলো বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। চলতি বছর তার বিদেশে যাবার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও করা হয়। নানা বাড়িতে থাকার সুবাদে প্রতিবেশী ডাঃ ইমরান হোসেনের মেয়ে রিয়ার সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুবকের পরিবার গরিব হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই রিয়ার পিতাসহ স্বজনরা পারভেজ হাসানের উপর মধ্যযুগীয় নির্যান চালিয়ে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ।

পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী, মা কোহিনুর বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, গত ২১ জানুয়ারি শনিবার সকালে প্রতিবেশী ইমরানের মেয়ে রিয়া বাড়ি থেকে চলে যায়। ঘটনার দুই দিন পর রিয়াকে পাশর্^বর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে। তাদের নাতী ছেলে পারভেজ হাসান বাড়িতেই ছিল। ২৩ জানুয়ারি আসরের পর বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে উদ্দেশ্যে বের হলে পিতাসহ রিয়ার স্বজনরা তাদের নাতী পারভেজ হাসানকে টেনে হেঁচড়ে স্থানীয় প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সাথে বেঁধে মিজানুর রহমানসহ রিয়ার স্বজনরা পারভেজের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে দেখেন। আর না মারতে নির্যাতনকারীদের দুপা জড়িয়ে ধরেন তারা। এক পর্যায় সেখান থেকে পারভেজকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে নেয়। একটু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ফের রিয়ার পিতাসহ কয়েকজন মিলে পারভেজকে বেধড়ক মারপিট করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয়। মারপিট করে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেবার চেষ্টাকালে পারভেজ সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসলে যশোর ২শ ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পারভেজকে খুলনা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যায়। এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারি পারভেজ হাসানের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন।

পারভেজের খালা জাহানারা বেগম জানান, হাসপাতালে তার কোলেই পারভেজ শেষ নিশ^াস ত্যাগ করে। মারা যাবার আগে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে পারভেজ হাসান জানায়, তাকে মেরে জোর করে মুখের ভিতর বিষ ঢেলে দেয়া হয়। পারভেজের ভাষ্যটির একটি ভিডিও রেকর্ড স্বজনরা ধারন করে রাখেন। যার একটি কপি এ প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছেছে।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়ার পিতা ডাঃ ইমরান হোসেন ও তার ( ইমরান হোসেন) মামা সিরাজুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ।

প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তিনি মারপিটের সাথে জড়িত নন। মেয়ে পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে তার বাড়িতে এনেছিল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মেয়েপক্ষ ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দিলে তিনি ঠেকিয়ে ছিলেন।

থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনা জানার সাথে সাথে মামলা নেয়ার পর এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের পিতাসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।